নবজাতককে আদরে আদরে আগলে রেখেছে পালিত মা

শিউলী খাতুন বিউটির হদিস না মিললেও তার পরিচয় মিলতে শুরু করেছে

 

স্টাফ রিপোর্টার: নিজের সদ্যজাত সন্তানকে অন্যের কোলে তুলে দিয়ে আত্মগোপন করা শিউল খাতুন বিউটির পরিচয় মিলতে শুরু করলেও তার হাদিস মিলছে না। সে তার স্বামীর তৃতীয় স্ত্রী। আর শিউলীর? বর্তমান স্বামী আমিরুল ইসলাম তার দ্বিতীয় স্বামী। দীর্ঘদিন ধরে চুয়াডাঙ্গা রেলবস্তিতেই বসবাস করে আসছিলো শিউলী খাতুন বিউটি।

স্বামী আমিরুলের একটি হাতের কবজি থেকে কাটা। কবে কীভাবে তার হাতের কবজি কেটে ফেলা হয় তা অবশ্য নিশ্চিত করে জানা সম্ভব হয়নি। তার বাড়ি ঝিনাইদহের কোনো এক গ্রামে। প্রথম স্ত্রী নিজের গ্রামে থাকলেও দ্বিতীয় স্ত্রীও থাকে চুয়াডাঙ্গার রেলবস্তির একটি ভাড়ার বাসায়। আর রেলবস্তিরই পৃথক বাড়িতে থাকতো শিউলী খাতুন বিউটি। প্রথম স্বামীর সংসার করার সময় শিউলী খাতুন বিউটির এক সন্তান আসে। সেই সন্তান সে নিজের কাছেই রেখেছে। তার বর্তমান বয়স প্রায় ৬ বছর। আর আমিরুলকে বিয়ে করে চুয়াডাঙ্গা রেলবস্তিতে বসবাস করাকালেই আরো এক সন্তান প্রসব করে। সেই সন্তানের বয়স বর্তমানে ২ বছর। পরে আবারও অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়ে। গত ঈদের দিন মাতৃসদনে সন্তান প্রসব করে, সেই কন্যা সন্তানকে নিয়েই ঘটছে নানা ঘটনা। বর্তমানে ওই কন্যা নবজাতকের ঠাঁই মিলেছে পালিত মায়ের কোলে।2 (2) copy

কন্যাসন্তানকে প্রথমে একজনের নিকট দিলেও পরে অন্যদের হাতে তুলে দিয়েই আত্মগোপন করে শিউলী খাতুন বিউটি। গতকাল চুয়াডাঙ্গা রেলবস্তি এলাকায় শিউলী খাতুন বিউটি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে কেউ কেউ বলেছেন, চিনি না। কেউ কেউ বলেছেন, ওদের আবার স্বামী সংসার ঠিক থাকে নাকি। অবশ্য কয়েকজন দায়িত্বশীল পুরুষ বলেছেন, শিউলী খাতুন বিউটির বাড়ি ঢাকা মানিকগঞ্জে। সেখানেই তার প্রথম বিয়ে হয়। প্রথম স্বামীর ঘর সংসার করাকালে ভালোই ছিলো। প্রথম স্বামী ছেড়ে দেয়ার পর সে অথৈ সাগরে ভাসে। টোকাই হিসেবে এটা ওটা কুড়িয়ে বিক্রি করে পেটচালাতে থাকে। এরই মাঝে পরিচয় হয় হওয় ভিক্ষুক আমিরুল ইসলামের সাথে। আমিরুল তাকে তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করলেও শিউলী খাতুন বিউটির হয় দ্বিতীয় স্বামী। সন্তান নিলেই হবে না, তার ভোরন-পোষণ করতে হবে। এরকম সচেতন ছিলো না বিউটি। দু বেলা দু মুঠো খাবার জোগাতেই যার দিন শেষ হয়, সেই বিউটি ওসব বুঝবে কীভাবে? তা ছাড়া এলাকায় তো জন্মনিয়ন্ত্রণ করা কাউকে দেখাই যায় না। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে!

নবজাতক কন্যা কেমন আছে? তা জানতে গতকাল টিঅ্যান্ডটিপাড়ার ওই বাসায় গেলে পালিত মা আতঙ্ক প্রকাশ করে বলেন, দেখুন একজন অসহায় মায়ের এক সন্তান নিয়ে বেশ ঝামেলায় আছি। দেখুন আমার ছেলে শুধু ঘোমাচ্ছে, আর মেয়েটা কেমন তাকিয়ে হাত-পা নাড়িয়ে খেলা করছে। ওর ওপর মায়া বসে গেছে। আমি আমার মেয়ের বিষয়ে অন্য কিছু ভাবতেই পারছি না। বুকের দুধ ছেলে ও মেয়েকে খাওয়াচ্ছি। অনেকেই তো জমজ সন্তান বড় করে। আমি সেই ভেবেই জমজ সন্তানের মতোই ভাবছি। আর দেখা শোনার জন্য একাধিক গৃহপরিচাকাও রেখেছি। কি ভালো করিনি?

জ্বি ভালো করেছেন। মেয়েটার মাকে তো পাচ্ছি না। ওর ছবি আছে? যে মা তার সন্তানকে অন্যের কোলে রেখে চলে গেলো, কেন গেলো? এটা আমাদের জানা দরকার। এসব প্রশ্নের জবাবে পালিত মা বললেন, যে মা নিজেই অসুস্থ, নিজে খেতে পারে না। বস্তিতে বসবাস করে। তার সন্তান রয়েছে। তাকেই সে যখন ভালোভাবে বড় করতে পারছে না, তখন সদস্যজাত শিশু কন্যাকে সে বড় করতে পারবে না বলেই তো আমার কোলে দিয়ে গেছে। আমি ওকে পাওয়ার পর সত্যিই অন্য কিছু ভাবতে পারছি না। যখন শুনেছি বিক্রি হয়ে গেছে, পাচারকারীদের কবলে পড়েছে। ঢাকায় পাচার হয়ে যাচ্ছে। তখন আমার যে কি হয়েছে তা বলতে পারবো না। ভাগ্যিস ওকে ফেরত পেয়েছি। আপনারা দোয়া করুন, আমি যেন প্রকৃত মায়ের মতোই ওকে বড় করে তুলতে পারি। ও যেন সত্যি সত্যিই আমার মেয়ে হয়। ওর নামও রেখেছি। তবে তা পত্রিকায় প্রকাশ করতে দেবো না। কারণ, আমার সাথেই ওর সম্মান জড়িয়ে গেছে।

বাব্বা! মনে হচ্ছে খুব ভালো বাসছেন? ঠিকই তো। ভালোবাসবো না কেন। যে কোন নারীই ওর মতো মেয়েকে ভালো বাসবে। ভালোবাসার মতোই তো ও। ওকে আমি সারাটা জীবন আগলে রাখতে চাই। প্লিজ, সহযোগিতা করুন।