দৌলতপুর প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার দৌলতপুর পদ্মার ভাঙন কবলিত ফিলিপনগর ইউনিয়নের ইসলামপুর, আবেদের ঘাট, ফিলিপনগর ও মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীর চর এলাকায় ভাঙনের মাত্রা তীব্র হয়েছে। ইতোমধ্যে ১ হাজার ঘরবাড়ি এবং দেড় হাজার হেক্টর আবাদি জমি তলিয়ে গেছে। ভাঙন অব্যাহত থাকলে হুমকির মুখে পড়বে সদ্য নির্মিত ভারত-বাংলাদেশ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনও। এলাকা পরিদর্শন করেছেন দৌলতপুর আসনের সংসদ সদস্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফাজ উদ্দিন আহমেদ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ওবাইদুর রহমান।
গতকাল বুধবার ভাঙন কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মহিষকুণ্ডি-রায়টা বেড়ি বাঁধের ফিলিপনগর ইউনিয়নের ইসলামপুর থেকে মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচর পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকায় পদ্মা নদীর ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এখানকার ইসলামপুর, ফিলিপনগর, উত্তর ফিলিপনগর, গোলাবাড়ি ও বৈরাগীরচর পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনে বিলীন হতে চলেছে। ভাঙনের মাত্রা এতো তীব্র যে, অনেকে বাড়ি ঘরের মালামাল সরিয়ে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। এদিকে নদী থেকে মাত্র ১শ’ মিটারের মধ্যে অবস্থিত হওয়ায় ফিলিপনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ফিলিপনগর সংযুক্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পিএম কলেজ, শহীদ ইয়াকুব আলী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, কাচারীপাড়া রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর ফিলিপনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইসলামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ইসলামপুর মক্তব ও খানকা শরীফ, ইসলামপুর বাজার, গোলাবাড়িয়া মাদরাসা, ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদ, ফিলিপনগর ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও ফিলিপনগর বাজার যেকোনো সময় বিলীন হয়ে যাবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভাঙন থেকে কয়েক ফুট দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে গত বছর ৫৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ইসলামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান ভবন। ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নঈমুদ্দিন সেন্টু জানান, এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ইতোমধ্যে অবহিত করা হয়েছে। ইসলামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মঈনুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি ফিলিপনগর গোলাবাড়ি অংশে ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে যে ব্লক বসানোর কাজ শুরু হয়েছে সেটি ইসলামপুর আবেদের ঘাট এলাকা থেকে শুরু করা হলে এ এলাকাটিকে ভাঙনের হাত রক্ষা করা যেত। সংসদ সদস্য আফাজ উদ্দিন আহমেদ জানান, পদ্মার ভাঙন থেকে এ এলাকাটিকে রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকার কাজ দ্রুত সময়ে সম্পন্ন করা হবে। তিনি আরো বলেন, পদ্মার ভাঙন রোধকল্পে যা করণীয় সরকার সব কিছুই করবে। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ওবাইদুর রহমান জানান, পদ্মার বর্তমান অবস্থা খুবই বিপদজনক পর্যায়ে রয়েছে। আমরা সেখানে প্রাথমিকভাবে বালির বস্তা দিয়ে ভাঙন রোধ করার কাজ শীঘ্রই শুরু করবো।
অন্যদিকে, পদ্মায় পানি বৃদ্ধির ফলে গত এক সপ্তায় উপজেলার রামকৃঞ্চপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের ২৬টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিশুদ্ধ পানি ও তীব্র খাদ্য সঙ্কটে পড়েছে এখানকার বানভাসি মানুষ। টানা বর্ষণ ও ভারতীয় অংশে ফারাক্কা বাধের সবকটি গেট খুলে দেয়ায় বানে পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে উপজেলার রামকৃঞ্চপুর ইউনিয়নের ভাগজোত, লোকনাথপুর, জিন্নাতের পাড়া, সোনাতলা চর, রামকৃঞ্চপুর, ঠোটারপাড়া, সাহেবনগর, কান্দিরপাড়া, বড়ইতলা, চাইডোবা, ইনছাফনগর, মোহাম্মদপুর, চল্লিশপাড়া, ছলিমের চর, মহসিনের চর, গড়েরপাড়া, মরারচর ও হায়দারের চর এবং চিলমারী ইউনিয়নের বাজুমারা, খারিজারথাক, মানিকের চর, উদয়নগর, বাহেরমাদি চর, আদম ব্যাপারীপাড়া, জোতাশাহী ও বাংলাবাজার গ্রাম। বন্যার পানিতে প্রায় ৩ হাজার বিঘা জমির উঠতি ফসল আউশ ধান, ভুট্টা ও পাটক্ষেত সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে সীমান্ত সংলগ্ন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি’র রামকৃঞ্চপুর, ঠোটারপাড়া, চিলমারী ও চর চিলমারী ক্যাম্প, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং ৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক। ওই এলাকায় বন্যার্ত মানুষের দুর্ভোগের পাশাপাশি খাবার পানি তীব্র সঙ্কট দেখা দেয়ায় সেখানে পানিবাহিত রোগের প্রাদূর্ভাব দেখা দিয়েছে।
দৌলতপুর প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়সূত্রে জানা গেছে, দুটি ইউনিয়নের ৫ হাজার ৩শ’টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন প্রেরণ করা হয়েছে। জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা বিশ্বনাথ পাল জানান, এ এলাকার মানুষের জন্য এ পর্যন্ত ৭৩ মেট্রিক টন খাদ্য বরাদ্দ পাওয়া গেছে।