গ্রেনেড হামলা: ৪৯১ সাক্ষীর ৭১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ

স্টাফ রিপোর্টার: বিচার শুরুর পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে21ই রয়েছে ২১ আগস্টের মামলা। ৪৯১ জন সাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৭১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আলোচিত এই মামলার কার্যক্রম কবে শেষ হবে- জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ আন্তরিকতার সঙ্গে মামলার বিচার শেষ করতে তৎপর। যেভাবে সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হচ্ছে, তাতে দ্রুত মামলার বিচারকাজ শেষ হবে। একই আশাবাদ প্রকাশ করেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর পিপি আবু আবদুল্লাহ ভূঁইয়াও, যে আদালতে মামলার বিচার চলছে। নয় বছর আগের এ হামলার ঘটনাটিকে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টার অভিযোগ ওঠার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে শুরু হয় বিচার। তত্ত্বাবধায়ক আমলে শুরু হওয়া বিচারের মধ্যে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর অধিকতর তদন্ত হয়, দেয়া হয় সম্পূরক অভিযোগপত্র। আর এর মধ্যদিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার এ মামলায় আসামির তালিকায় যোগ হন ৩০ জন, যার মধ্যে রয়েছেন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে হুজি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছিলো, তার সঙ্গে নতুন ৩০ জন যোগ হয়ে আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ৫২ জনে। দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা এ দু মামলা দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হলেও নির্ধারিত ১৩৫ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার শেষ না হওয়ায় তা জজ আদালতে ফেরত যায়। নতুন আসামি যোগ হওয়ার পর পুনরায় মামলাটি দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়, এখন মামলার বিচারকাজ চলছে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে। পুরোনো ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে স্থাপিত বিশেষ এজলাসে মামলার ৭২তম সাক্ষী র‌্যাবের সাবেক গোয়েন্দা উপপরিচালক মোহাম্মদ আতিকুর রহমানের সাক্ষ্য নিয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২৬ আগস্ট তারিখ ঠিক করেছেন এ বিচারক। আতিকের আগে এ মামলায় সাক্ষ্য দেন বিএনপি আমলের উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর বডিগার্ড পুলিশ কনস্টেবল আহসান হাবিব। মামলার অন্যতম আসামি পিন্টু কারাগারে রয়েছেন। এ মামলায় সাক্ষ্যে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মিজানুর রহমান বলেছিলেন, ২০০৪ সালের ১৮ ও ১৯ আগস্ট উপমন্ত্রী পিন্টুর বাসায় ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা হয়। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজি নেতা মুফতি হান্নান, আবু তাহের। তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরও ওই বৈঠকে হাজির হয়েছিলেন বলে মুফতি হান্নানকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানান ওই সময়কার ডিজিএফআই কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানসহ অন্তত ২৩ জন নিহত এবং বহু আহত হন। বিএনপি আমলে এ হামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ভবঘুরে জজ মিয়াকে আসামি সাজিয়ে ‘নাটকের’ চেষ্টা হয়েছিলো বলে আওয়ামী লীগের অভিযোগ। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৮ সালের ১১ জুন সিআইডি কর্মকর্তা ফজলুল কবীর ২২ জনকে আসামি করে দু মামলার অভিযোগপত্র দেন। এরপর সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে এর অধিকতর তদন্ত হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার কাহহার আকন্দ অধিকতর তদন্ত করে ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন, যাতে হাওয়া ভবনের সম্পৃক্ততা উঠে আসে। সম্পূরক অভিযোগপত্রে অভিযুক্ত ৩০ আসামির মধ্যে তারেক ছাড়া অন্যরা হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপির সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে সাইফুল ইসলাম ডিউক, ঢাকার সাবেক কাউন্সিলর আরিফুর রহমান। সাবেক সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে অভিযুক্ত হন এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক রেজ্জাকুল হায়দার ও আব্দুর রহিম, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এটিএম আমিন, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, অবসরপ্রাপ্ত আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহিদুল হক ও খোদা বখশ চৌধুরী, সাবেক ডিসি (পূর্ব) মো. ওবায়দুর রহমান, সাবেক ডিসি (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান এবং সাবেক তিন তদন্ত কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত এএসপি আব্দুর রশিদ, অবসরপ্রাপ্ত এএসপি মুন্সী আতিকুর রহমান ও বিশেষ পুলিশ সুপার মো. রুহুল আমিন। এছাড়া হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হানিফ, মাওলানা শেখ আব্দুস সালাম, মো. আব্দুল মাজেদ বাট ইউসুফ, আব্দুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মদ, আব্দুর রউফ ওরফে আবু ওমর হোমায়রা, আব্দুল হান্নান সাব্বির, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মাওলানা ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই, রাতুল বাবুকেও সম্পূরক অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়। এ আসামিদের মধ্যে তারেক, হারিছ, কায়কোবাদসহ কয়েকজনকে পলাতক দেখিয়েই তাদের বিচার চলছে। আগের অভিযোগপত্রের আসামিদের মধ্যে যারা আটক রয়েছেন, তারা হলেন- সাবেক উপমন্ত্রী সালাম পিন্টু, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান, মহিবুল্লা ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি, শরীফ শাহেদুল আলম বিপুল, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ আবু তাহের, শাহাদাত উল্লাহ জুয়েল, হুসেইন আহমেদ আমিন, আবু জান্দাল ওরফে মঈনুদ্দীন শেখ, আরিফ হাসান সুমন, রফিকুল ইসলাম সবুজ ও উজ্জ্বল ওরফে রতন। আসামিদের মধ্যে পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন,  মো. খলিল, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল, মুত্তাকিন, মুরসালিন, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার ও মাওলানা লিটন পলাতক রয়েছেন।