মাথাভাঙ্গা মনিটর: ভারতের এক যুক্তিবাদী চিন্তককে গতকাল মঙ্গলবার গুলি করে খুন করা হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন থেকে কুসংস্কার ও কালা জাদুবিরোধী একটি আইন প্রণয়নের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন। মহারাষ্ট্র প্রদেশের পুনে শহরের পুলিশ প্রধানের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি বলেছে, গতকাল মঙ্গলবার সকালে চিকিত্সক নরেন্দ্র ডাভোলকার যখন সকালে প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন, সে সময় দুজন বন্ধুকধারী মোটরসাইকেলে চড়ে এসে তাকে গুলি করে চলে যায়।
পুনের পুলিশ কমিশনার গুলাবারো পোল বলেন, গতকাল সকালে তিনি (নরেন্দ্র) খুন হওয়ার পর আমরা তদন্ত শুরু করেছি। তিনি বলেন, হত্যার পেছনের উদ্দেশ্য খুঁজে দেখা হচ্ছে, তবে এখনো কাউকে সন্দেহ করা হচ্ছে না।
নরেন্দ্র প্রায় দু দশক আগে মহারাষ্ট্র অন্ধশ্রাদ্ধ নির্মূলন কমিটি গঠন করেন। কার্যত ভারতের সমাজে হাজার বছর ধরে টিকে থাকা কুসংস্কার দূর করাই ছিলো এ কমিটির মূল লক্ষ্য। এজন্য তিনি তার সাথীদের নিয়ে প্রগতিশীল ও বৈজ্ঞানিক চিন্তা বিকাশে কাজ করছিলেন।
তিনি গত কয়েক বছর ধরে একটি কুসংস্কারবিরোধী আইন প্রণয়নের জন্য মহারাষ্ট্র সরকারকে চাপ দিচ্ছিলেন। এসব তত্পরতা কারণে এক সময় তার বিরুদ্ধে ধর্মবিরোধী হওয়ার অভিযোগ আসে। তবে তিনি তা বিভিন্ন সময় অস্বীকার করে এসেছেন।
বছর দুয়েক আগে এক সাক্ষাত্কারে নরেন্দ্র বলেন, প্রস্তাবিত আইনটির কোথাও ঈশ্বর বা ধর্মের কথা বলা নেই। এ ধরনের কোনো কথাও ছিলো না। ভারতের সংবিধানের সবার ধর্ম পালনের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে, এ অধিকারে কেড়ে নেয়ার সাধ্য কারো নেই।
তবে ভারতের বিভিন্ন হিন্দু ধর্মাবলম্বী ব্যক্তি, যারা নিজেরা অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী বলে দাবি করেন, নরেন্দ্র তাদের বিভিন্ন সময়ে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন। বিভিন্ন ধর্মানুষ্ঠানে পশু কোরবানি বা বলি দেয়ার প্রথার বিরোধিতা করতেন তিনি। তিনি সাধনা নামের একটি সাময়িকী প্রকাশ করতেন।
মানবাধিকার সংগঠনের প্রখ্যাত নেতা সুমিতা পদ্মনাবান নরেন্দ্র হত্যায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এ ঘটনার মধ্যদিয়ে ভারতের সব যুক্তিবাদীদের ওপরে হামলা করা হলো। তিনি আরও বলেন, এদেশে যৌতুক, ডাইনি-ধরা ও শিশু বিয়ের বিরুদ্ধে আইন থাকলেও অন্ধবিশ্বাস বিরোধী আইন নেই।
মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর আর পাতিল এ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, হত্যাকারীদের অবশ্যই বিচার করা হবে।