ঝিনাইদহ অফিস: ঢাকা মহানগর ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবাজার মার্কেট কমপ্লেক্সের সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম মজুমদার হত্যামামলায় গ্রেফতারকৃত তার শাশুড়ি লিপি বেগম আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়াও এ মামলায় গ্রেফতারকৃত অপর আসামি মহম্মদ আলী মহব্বতও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গত ৬ আগস্ট র্যাব বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে রফিকুলের শাশুড়ি লিপি বেগম, মহম্মদ আলী মহব্বত, ফজলুর রহমান ও মিজানুর রহমানকে গ্রেফতার করে।
শাশুড়ি লিপি বেগম তার জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন, ছোট মেয়ের সাথে বিয়ের দু মাসের মধ্যে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তার সাথে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তোলে জামাই রফিকুল ইসলাম। নইলে তার ছোট মেয়েকে মেরে ফেলার ভয় দেখাতো। কিছুদিন পর এ দৈহিক সম্পর্ক নিরবচ্ছিন্ন করার জন্য বাড়ি তৈরি করে দেয়। মাসে ২/৩ বার তার বাড়িতে আসতো এবং দৈহিক সম্পর্কে লিপ্ত হতো। এতে তার মধ্যে আক্রোশের সৃষ্টি হয়। জবানবন্দিতে তিনি আরো জানান, তার ছোট ভাইয়ের বন্ধু মহব্বত। জামাইকে পেটানোর জন্য তার সাথে কথা বলেন তিনি। পরিকল্পনা করেন রফিকুলের কাছে দু লাখ টাকা চাঁদা দাবি করবে মহব্বত। প্রতিবেশী যুবক রানার মাধ্যমে মহব্বতের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে থাকেন লিপি বেগম। জামাই বাড়িতে এলে মহব্বতকে খবর দেয়ার কথা হয়। রফিকুলকে যারা নিতে আসবে তারা নিজেদেরকে প্রশাসনের লোক পরিচয় দেবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৭টার দিকে একটি মাইক্রোবাসে তার বাড়ির সামনে এসে থামে। আগের কথামতো ৫/৬ জন বাড়িতে ঢুকে রফিকুলকে তুলে নিয়ে যায়। এর দেড় ঘণ্টা পর বড় জামাই খবর দেয়, কুমারখালীর আদাবাড়ে গ্রামের মাঠের মধ্যে রফিকুলের লাশ পড়ে আছে।
আদাবাড়ে গ্রামের গ্রন্তাজ আলী মোল্লার ছেলে মহম্মদ আলী মহব্বত ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে রফিকুলের হত্যা ষড়যন্ত্রে বিবরণ দিয়ে কারা কারা এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলো তাও উল্লেখ করেন। ১০ পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে কীভাবে রফিকুলকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয় তার বিবরণ আছে। র্যার ৮ আগস্ট ঢাকা থেকে এনে ঝিনাইদহের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পারভেজ শাহরিয়ারের আদালতে তাদের হাজির করে। জবানবন্দিগ্রহণ শেষে তাদের জেলহাজতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। হত্যাকাণ্ডের সাথে গ্রেফতারকৃতরা ছাড়াও খেলাফত, শিমুল, সোহেল, মধু ও তোতা জড়িত বলে র্যাবসূত্রে জানা গেছে।
চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি রাতে র্যবের লোক পরিচয়ে রফিকুল ইসলামকে শাশুড়ির বাড়ি থেকে মাইক্রোবাসযোগে অপহরণ করা হয়। ওই রাতেই কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার একটি পেঁয়াজক্ষেতে হত্যার পর রফিকুলের লাশ ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা। হত্যাকাণ্ডের ৯ দিন পর ১৪ জানুয়ারি নিহত রফিকুলের ছোট ভাই মফিজুর রহমান বাদী হয়ে শৈলকুপা থানায় হত্যামামলা দায়ের করেন। ৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মামলার তদন্তভার র্যাবের হাতে ন্যস্ত করা হয়। ৬ আগস্ট র্যাব বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে রফিকুলের শাশুড়ি লিপি বেগম, মহম্মদ আলী মহব্বত, ফজলুর রহমান ও মিজানুর রহমানকে গ্রেফতার করে।