স্টাফ রিপোর্টার: নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ‘এক চুলও নড়বো না’ বক্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছেন বিরোধীনেতা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেছেন, এক চুলও নড়বেন না বলেছেন- কিন্তু আন্দোলনের বাতাস বইতে শুরু করলে চুল ঠিক থাকবে না। জনগণের আন্দোলনের বাতাসে চুল এলোমেলো হয়ে যাবে, দিশেহারা হয়ে যাবেন। চুল তো থাকবেই না, নিজেদের অস্তিত্ব নিয়েও টানাটানি পড়বে। সংসদের আগামী অধিবেশনে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, সময়মতো কাজ করা ভালো, পরে সময় পাবেন না। আমাদের হাতেও সময় থাকবে না। নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করুন। নির্বাচনের মাঠে সমানে সমানে লড়ি। আসুন, ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ পরিচালনা করি। জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত আলোচনাসভায় তিনি এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, মাইনাস টু ও জেলের ভয় দেখাচ্ছেন। আমি মাইনাস টু’র কথা বলিনি। আমরা চাই দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকুক এবং সে লক্ষ্যে রাজনীতি করছি। আমরা আন্দোলন চাই না, শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় নির্বাচন চাই। জেলের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই, আমাদের কিছু হবে না। কারণ আমরা এখন সরকারে নেই, আমাদের হাতে ক্ষমতাও নেই। আপনারাই সমস্ত টেন্ডারবাজি ও দুর্নীতি করছেন। যা হয়, আপনি ও আপনার লোকেদেরই হবে। তাই বলছি, বেশি আস্ফালন করবেন না। আস্ফালন ভালো নয়।
আলোচনাসভায় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আরএ গনি, এমকে আনোয়ার, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান এবং মঞ্চের সামনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক সংসদ সদস্য শামসুজ্জামান দুদু, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন, আহমদ আজম খান, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ বিএনপি ও অঙ্গদলের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে চুয়াডাঙ্গা-মেরহরপুর ও ঝিনাইদহেও স্বেচ্ছাসেবকদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়।
দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। যদি আওয়ামী লীগ দলীয় নির্বাচনের অধীনে নির্বাচন দেয় তাহলে বিরোধীদল সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। জনগন ওই নির্বাচন মেনে নেবে না। তাই নিরদলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচ দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি সভাপতি সাবেক সদস্য সদস্য হাজি মো. মোজাম্মেল হক। আগামীতে যেকোনো আন্দোলন সংগ্রামে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থেকে শরিক হওয়ার জন্য আহ্বান জানান। তিনি গতকাল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন উপলক্ষে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছিলেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল সকাল ছটায় দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উদ্বোধন ঘোষণা করেন। বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে স্বেচ্ছাসেবকদলের সভাপতি অ্যাড. শামিম রেজা ডালিমের নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য ৱ্যালি বের করে। ৱ্যালিটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে দলীয় কার্যালয়ে এসে আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। আলোচনাসভায় স্বেচ্ছাসেবকদলের সভাপতি অ্যাড. শামিম রেজা ডালিমের সভাপতিত্বে স্বোচ্ছাসেবকদলে সাংগঠনিক সম্পাদক মখলেছুর জামান মখলেছের উপস্থাপনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি এম জেনারেল ইসলাম, যুগ্মসম্পাদক অ্যাড. ওয়াহেদুজ্জামান বুলা, দপ্তর সম্পাদক অ্যাড. আ.স.ম আব্দুর রউফ, সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মন্টু, পৌর বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম রতন, সাধারণ সম্পাদক মজিবুল হক মজু প্রমুখ। বক্তব্য রাখেন- যুবদলের যুগ্মআহ্বায়ক মোকাররম হোসেন, ছাত্রদলের আহ্বায়ক শরিফ উর-জামান সিজার, সিনিয়র যুগ্মআহ্বায়ক এমএ তালহা, যুগ্মআহ্বায়ক মনজুরুল জাহিদ, রাজীব খান, সুজন মালিক, স্বেচ্ছাসেবকদলের হাবিবুর রহামন বুলেট, শ্রমিকদলের হারুন অর-রশিদ হারুন প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন- সদর থানা বিএনপির এমএ সাঈদ, মনিরুজ্জামান মনি, যুবদলের জেলা সদস্য আশরাফ বিশ্বাস মিল্টু, মুকুল জোয়ার্দ্দার, মামুন রেজা সবুজ, তৌফিকুজ্জামান তৌফিক, ফারুক হোসেন মল্লিক, রফিকুল ইসলাম তনু, আকতার হোসেন, মুক্তি, আমিরুল, মুস্তাক, ফারুক আহম্দে, হীরা, শাহাদত মাস্টার, নজরুল ইসলাম, আইনুল হক, আতিয়ার রহমান, লিটন, আলাউদ্দিন, অধ্যাপক আতিয়ার রহমান, আব্দুর রাজ্জাক বাবুল, ইসলাম উদ্দিন, আবদলি মজিদ, মিলন মিয়া, মীর লিয়াকত আলী, আসলাম উদ্দিন, আজাদ, আরিফুজ্জামান পিন্টু, মহিদুল ইসলাম, গোলাম কিবরিয়া তিস্তা, রাদশা শেখ, স্বেচ্ছাসেবকদলে ফিরোজ ইফতেখার, ইমদাদ হোসেন, আশাবুল হক দিলা, বকুল মিয়, চুয়াডাঙ্গা জেলা ওলামাদলের সভাপতি ফজলুর রহমান, জাহিদ হোসেন, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানের সভাপতি সুশীল কুমার, সম্পাদক স্বাধীন অধিকারীসহ জেলা বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
অপরদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি একাংশ স্বেচ্ছাসেবক দলের ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন উপলক্ষে ৱ্যালি ও আলোচনাসভার আয়োজন করে। কেদারগঞ্জস্থ কার্যালয়ে কেক কাটার মধ্যদিয়ে জন্মদিনের সূচনা করা হয়। আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের একাংশের আহ্বায়ক আব্দুল মান্নান। প্রধান অতিথি ছিলেন- জাতীয় কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য মুহা. অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপি নেতা অ্যাড. এমএম শাহাজাহান মুকুল, মাহমুদুল হক পল্টু, রউফুন নাহার রিনা, আবু আলা মো. সামছুজ্জামান, সিরাজুল ইসলাম মনি, মুন্সি আওরঙ্গজেব বেল্টু, হাবিবুলা জোয়ার্দ্দার ছটি প্রমুখ।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুর-১ আসনের সাবেক এমপি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাসুদ অরুন বলেছেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনী অবাদ ও সুষ্ঠু হওয়ার নয়। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার আগামীতে ক্ষমতায় আসার জন্য বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। সংগ্রাম শুরু হয়েছে। এ সংগ্রাম আরও জোরদার করা হবে। মাসুদ অরুন সকল ভেদাভেদ ভুলে সকলকে এক সাথে কাজ করার আহ্বান জানান। গতকাল সোমবার জেলা বিএনপির কার্যালয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সভায় মেহেরপুর-১ আসনের সাবেক এমপি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাসুদ অরুন প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ওই কথা বলেন। জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্মআহ্বায়ক তোফায়েল আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি আব্দুর রহমান, পৌর বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর বিশ্বাস, জেলা মহিলাদলের সভানেত্রী সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রোমানা আহমেদ রুমা, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহীদুল হক মাস্টার, মুজিবনগর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রশিদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্মআহ্বায়ক আজিমুদ্দিন গাজী, মেহেদী হাসান রোকন, শহীদুল ইসলাম, ইমান আলী, তাঁতিদলের সাধারণ সম্পাদক মাহামুদুল হাসান জুয়েল প্রমুখ।
এদিকে স্বেচ্ছাসেবক দলের ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মেহেরপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে একই দিন মেহেরপুর জেলা বিএনপির শাহাজীপাড়াস্থ কার্যালয়ে আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ মোস্তাকিমের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আনছার-উল হক। উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি নেতা আনোয়ারুল হক কালু, অ্যাড. মোখলেছুর রহমান স্বপন, সদর উপজেলা যুবদলের সভাপতি হাসিবুজ্জামান স্বপন, পৌর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান তপন, রুহুল আমিন, সামছুল আলম, ছাত্রদল নেতা রেমিম, ফিরোজ, আনিছুর রহমান লাভলু, নূরতাজুল ইসলাম প্রমুখ। পরে সেখানে স্বেচ্ছাসেবক দলের ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেক কাটা হয়।
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কেক কাটা, শোভাযাত্রা ও আলোচনাসভার মধ্যদিয়ে ঝিনাইদহে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবকদলের ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল ১১টায় শহরের কবি সুকান্ত সড়ক থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করেন দলীয় নেতাকর্মীরা। শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মসিউর রহমান। শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে সরকারি কেসি কলেজের সামনে পৌঁছুলে মিছিলে বাধা দেয় পুলিশ। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে ফিরে আলোচনাসভায় অংশ নেন নেতাকর্মীরা। সেখানে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটা হয়। জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সভাপতি কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মসিউর রহমান। বক্তব্য রাখেন- জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান পাপ্পু, সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল ইসলাম, বিএনপি নেতা জাহিদুল ইসলাম মনা, শাহজাহান আলী, জিয়াউল ইসলাম ফিরোজ, আশরাফুল ইসলাম পিন্টু প্রমুখ।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মসিউর রহমান বলেন, ৱ্যাব ও পুলিশবাহিনীকে সরকার রক্ষীবাহিনীর মতো ব্যবহার করছে। দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ অযোগ্য আওয়ামী লীগ সরকার ফ্যাসিবাদী কায়দায় হামলা-মামলা, গ্রেফতার, নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার অপচেষ্টা করছে। সরকার যতোই ষড়যন্ত্র করুক না কেন তাতে কোনো লাভ হবে না। রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে এদেশের মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে দিতে সরকারকে বাধ্য করবে।
আওয়ামী লীগ সিটি নির্বাচনে চরম ভরাডুবির কারণে দিশেহারা হয়ে বিরোধী শক্তিকে নিধনের অপকৌশল চালাচ্ছে। জালেম সরকারের পতন ছাড়া দেশে হত্যা, খুন, গুম ও অপহরণ বন্ধ হবে না। বিএনপিসহ বিরোধীদলের সকল নেতাকর্মীর মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবিও জানান তিনি।