গারো উৎসব ওয়ানগালা

গারো উৎসব ওয়ানগালা শুরু

 

বাংলাদেশের পাহাড়ি নৃ-গোষ্ঠী গারো। তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতি ও কৃষ্টির অন্যতম উৎসব হলো নবান্ন বা ওয়ানগালা উৎসব। প্রতি বছর শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমান্তবতী গারো সম্প্রদায় অধ্যুষিত মরিয়মনগর গ্রামে ওয়ানগালা উৎসব পালন করা হয়।

 

এবারই প্রথম দুই দিনব্যাপী ১৯ ও ২০ নভেম্বর বৃহস্পতি ও শুক্রবার ওয়ানগালা উৎসব পালন করা হচ্ছে। এ উৎসবের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর প্রধান অতিথি এবং ধর্ম প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। উদ্বোধনী দিন বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় মহা খ্রিস্ট জাগের মধ্যদিয়ে ওয়ানগালার আনুষ্ঠানিকতা শুরু করা হয়। এরপর দুপুরে ওয়ানগালার মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সুদিন চিরান এবং স্বাগত বক্তব্য দেন, উদযাপন কমিটির নির্বাহী আহ্বায়ক অঞ্জন আরেং। পরে ওয়ানগালার নাগড়া, আদুরী, দামা ও মোমবাতি প্রজ্জ্বলন এবং সর্বশেষ গারোদের নিজস্ব কৃষ্টির সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

 

শুক্রবার সকালে সা-সাৎ-সাওয়া ধুপারিতের মধ্য দিয়ে অতিথিদের স্বাগত জানানো এবং দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান শুরু করা হবে। এরপর দিনব্যাপী আলোচনা সভা, সাংস্কুতিক অনুষ্ঠান, র‌্যাফেল ড্র, খেলাধুলা এবং পুরস্কার ও  ক্রেস্ট প্রদান করা হবে। ওয়ানগালা উৎসব আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা  গেছে, এক সময় গারো পাহাড়ি এলাকায় জুম চাষ হতো এবং বছরে মাত্র একটি ফসল হতো। তখন ওই জুম বা ধান ঘরে উঠানোর সময় গারোদের শস্যদেবতা ‘মিসি সালজং’কে উৎসর্গ করে এ উৎসবের আয়োজন করা হতো। এর কারণ হিসেবে জানা  গেছে, গারোদের ওই শস্যদেবতা এক সময় পাহাড়ি এলাকার তাদের হাতে কিছু শস্য দিয়ে বলেছিল, তোমরা এটা রোপন কর, তাতে  তোমাদের আহারের সংস্থান হবে এবং  তোমরা যে শস্য পাবে তা থেকে সামান্য কিছু শস্য আমার নামে উৎসর্গ করবে। এরপর থেকেই গারোরা তাদের শস্যদেবতাকে এই ফসল উৎসর্গ করে আসছে। কিন্তু গারোরা খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর তাদের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক প্রথাটি এখন ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে একত্রে করে পালন করা হয়।

 

অর্থাৎ এক সময় তারা তাদের শস্যদেবতা মিসি সালজংকে উৎসর্গ করে ওয়ানগালা পালন করলেও এখন তারা নতুন ফসল কেটে যিশু খ্রিস্ট বা ঈশ্বরকে উৎসর্গ করে ওয়ানগালা পালন করেন। এ সময় সামাজিক নানা আয়োজনসহ ধর্মীয় নানা আচার-অনুষ্ঠানাদিও পালন করা হয়।

 

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমান্তবর্তী মরিয়মনগর থ্রিস্টান ধর্মপল্লির নিয়ন্ত্রণে জেলার সদর উপজেলাসহ শ্রীবরর্দী, ঝিনাইগাতী এবং জামালপুর জেলার বক্সীগঞ্জ উপজেলার গারো সমাজের ৪৭টি গ্রাম রয়েছে। ওইসব গ্রমের প্রায় ২২ হাজার থ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী গারো সম্প্রদায়ের লোকজনের বসবাস। এ ছাড়া এবার মরিয়ম নগরের এই ওয়ানগালা উৎসবটি ৩০ বছরে পা দিয়েছে। ১৯৮৫ সাল  থেকে এখানে ওয়ানগালা উৎসব পালন করা হচ্ছে। ফলে এবার গারোদের মাঝে উৎসবের আমেজটা অন্যবারের চেয়ে অনেক বেশি। জেলার বিভিন্ন এলাকা  থেকে অসংখ্য খ্রিস্টভক্ত এবং গারাগানজিং, কতচু, রুগা, মমিন, বাবিল, দোয়াল, মাতচি, মিগাম, চিবক, আচদং, মাতাবেং ও আরেং নামে ১২টি গোত্রের গারো সম্প্রদায়ের লোকজন উপস্থিত হয়েছেন।

 

এদিকে, ওয়ানগালা উৎসব উপলক্ষ্যে মিশনের পাশে বসেছে জমজমাট মেলা। মেলায় গারোদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকসহ শিশুদের নানা রকমের খেলনা বিক্রি করা হয়। ফলে এখানে গারো শিশু ও যুবক-যুবতীরা বিভিন্ন পসরার দোকানে তাদের পছন্দের জিনিস কিনতে ভিড় জমায়। ওয়ানগালা উৎসবে জেলাসহ  জেলার বাইরে  থেকে আসা গারো এবং তাদের আত্মীয়রা একে অপরের সঙ্গে দীর্ঘদিন পর দেখা সাক্ষাৎ হওয়ায় তাদের মাঝে অনেকটা বড় দিনের উৎসবের মতো আনন্দ উপভোগ করেন। ফোকাস বাংলা।