স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থতার বদলে অন্ধত্ব!

একজন দুজন নয়, কমপক্ষে ২০ জন নারী-পুরুষ একটি করে চোঁখ হারিয়েছেন। স্বচ্ছ দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার আশায় অস্ত্রোপচার করিয়ে উল্টো চোখ হারিয়ে শুধু হাহুতাশই নয়, অনিশ্চয়তার প্রহর গুণছেন তারা। অস্ত্রোপচারের পর এক শ্রেণির পচনে অস্ত্রোপচার করা চোখটাই বিনষ্ট হয়ে গেছে। অপর চোখেও যাতে এ পঁচন সংক্রমিত না হয় সে লক্ষ্যে দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকাতেও নেয়া হয় একটি করে চোখ হারানো ২০ জনকে। ইম্প্যাক্ট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গা কেদারগঞ্জস্থ ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ কেয়ার সেন্টারে এদের অপারেশন করা হয়। গতকাল বুধবার চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ঘটনাস্থল তথা অপারেশন থিয়েটারসহ হেলথ কেয়ার সেন্টারটি পরিদর্শন করেন। তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তদন্তে প্রকৃত কারণ, প্রকৃত দোষী শনাক্ত হবে বলে বিশ্বাস।
সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে মানুষ এগিয়ে চলেছে, মানুষের প্রয়োজনেই স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের অবিস্মরণীয় সাফল্যও এসেছে। উন্নত বিশ্বে যখন মানব শরীরের প্রায় প্রতিটি অঙ্গই প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে সুস্থতা সহজলভ্য করে তুলেছে তখন উন্নয়নের লাইনে উঠেছি বলে দাবিদার দেশে একের পর এক স্বাস্থ্য সেবার বেহাল দশা ফুটে উঠছে। এটা কি অপারগতা নাকি দায়িত্বশীল করে তুলতে না পারার কুফুল? চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের পরিবেশ সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অনেকটাই স্বাস্থ্যসম্মত করা সম্ভব হয়েছে। যদিও পদে পদে অপ্রতুলতা, চিকিৎসকসহ লোকবল সংকট জেলার শীর্ষস্থানীয় সরকারি হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবার মান প্রত্যাশিত পর্যায়ে নেয়া যায়নি। এ কারণেই বেসরকারি ও বিভিন্ন সংস্থা সংগঠনের মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়েছে বহু স্বাস্থ্য সেবাদান কেন্দ্র। এর মধ্যে জেলা শহরের কেদারগঞ্জস্থ ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ কেয়ার সেন্টার অন্যতম। ফিজিওথেরাপিসহ নানাবিধ চিকিৎসা দিয়ে পরিচিত হয়ে ওঠা এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অপারেশন থিয়েটারটিতেও নাকি রয়েছে আধুনিকায়নের ছোঁয়া। যে অপারেশন থিয়েটারে আধুনিকতার ছোঁয়া, যে প্রতিষ্ঠানটির সাথে উন্নত বিশ্বের যোগসূত্রে রয়েছে সেই ফাউন্ডেশন পরিচালিত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দুদিনে ৬০ জনের চোখের অস্ত্রোপচারে ২০ জনের জীবনে বিপত্তি নেমে আসার খবর চরম হতাশার বটে।
কেন সুস্থতার বদলে ২০জন নারী-পুরুষকে হারাতে হলো চোঁখ? অবশ্যই তদন্ত করে দোষি শনাক্ত করতে হবে। শুধু দুঃখ প্রকাশের মধ্যদিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষোভ দূর করা সম্ভব নয়। একজনের জীবনে একটি চোঁখের প্রয়োজনীয়তা মূল্য দিয়ে পরিশোধ করাও অসম্ভব। যে চিকিৎসা সেবাদান কেন্দ্রে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করার প্রতিশ্রুতিতে খুলে রেখেছে দরজা, সেই প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা নিতেগিয়ে একজনের ন্যূনতম ক্ষতিও বড় ক্ষতি। যে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে সেই অস্ত্রে জীবাণু ছিলো? নাকি ব্যবহৃত ওষুুধ পথ্যে? প্রাথমিকভাবে প্রয়োজনীয় পথ্যে ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়ার অস্থিত্ব মিলেছে বলে প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তা হলে ওই পথ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না কেন? অজুহাতে দায় এড়ানোর চেয়ে প্রকৃত দোষির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কাম্য। অন্যথায় সমাজের ঘাড়ে বাড়বে খেসারতের বোঝা।