স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চাওয়া অন্যায় নয়, তবে…..

দুর্ঘটনা লেগেই আছে। সড়কে বের হয়ে কারোরই ন্যূনতম নিশ্চয়তা নেই যে, তিনি সুহালে বাড়ি ফিরতে পারবেন। এ যেন হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়ে বাড়ি থেকে কাজে বের হওয়া। কিন্তু এ অবস্থা আর কতোদিন? দিন যতো যাচ্ছে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি, অঙ্গহানির সংখ্যা ততোই বাড়ছে। অথচ, আমরা সকলেই চাই- স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ স্লোগানে সকলে সহমত হলেও নানা অজুহাতে আমরা আইনি পদক্ষেপে নিজেদের গুটিয়ে রেখে সমাজের জন্য ডেকে আনছি সর্বনাশ।
দুর্ঘটনাকে নিছক দুর্ঘটনা বলতে উন্নতবিশ্ব যখন অস্বীকৃতি জানাতে শুরু করেছে, তখনও আমরা সড়ক দুর্ঘটনাকে নিছক নিয়তি বলে দায় এড়ানোর মতো মানসিকতা লালন করে চলেছি। চলতি মাসের আজ ২০দিন। এ ক’দিনে চুয়াডাঙ্গায় বৈধ অবৈধ যান দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা ১২ ছাড়িয়ে গেছে। এ পরিসংখ্যান পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য থেকেই পাওয়া। পত্রস্থ হয়নি এমন দুর্ঘটনার সংখ্যাও যে কম নয় তা বোদ্ধারা নিশ্চয় অস্বীকার করবেন না। শুধু সড়ক দুর্ঘটনা নয়, অগ্নিকা- থেকে শুরু করে অনেক দুর্ঘটনা রয়েছে যা সতর্কতা অবলম্বনের মাধ্যমে এড়ানো সম্ভব। দুর্ঘটনার সংখ্যা শূন্যে নেয়া না গেলেও ট্রাফিক আইন যথাযথভাবে মেনে চলার মাধ্যমে বহুলাংশেই যে হ্রাস করা সম্ভব তা বলাই বাহুল্য। যন্ত্রচালিত অবৈধ যান বন্ধে যেমন আইন প্রয়োগে নমনীয়তা, তেমনই এসব যান চালানোর ক্ষেত্রে চালকের দক্ষতা যাচাইয়েও নেই তেমন পদক্ষেপ। বৈধ যানের ক্ষেত্রেও আইন অবজ্ঞার উদাহরণ যেমন বাড়ছে তেমনই বাড়ছে দুর্ঘটনার সংখ্যা। বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য কেউ না কেউ দায়ি। ফলে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। এটা শুধু ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের তরফেই নয়, পুলিশের তরফেও নেয়া দরকার। মামলা হলে মৃতদেহ মর্গে নিয়ে কাঁটাছেড়া করবে ভেবে অনেকেই তাতে সম্মত না হয়ে আপসের পথে হাঁটেন। মৃতদেহ কাঁটাছেড়া এড়াতে আপস তথা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়াটা বড় অন্যায় নয় কি? ময়নাতদন্ত বা মৃতদেহ কাঁটাছেড়া করলে আত্মা কষ্ট পায় বলে যে ভ্রান্ত ধারণা ওই অন্যায়কারীদেরই কৌশলে ছড়ানো। যা সমাজের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে ঘুরে ফিরে।
বৈধ অবৈধ যন্ত্রচালিত যানের দুর্ঘটনা রোধে চালকের অদক্ষতাই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দায়ী। যদিও তা আইনের দৃষ্টিতে প্রমাণ হচ্ছে না, হচ্ছে না দোষীর শাস্তি। দু একটি দুর্ঘটনা নিয়েও যদি আইন প্রয়োগে দৃষ্টান্তস্থাপন করা যায়, তা হলেও প্রতিকারের পথ প্রসস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তরফেও তেমন উদ্যোগ নেই, আইন প্রয়োগে নিযুক্তদেরও উদাসীনতা যেন চরমে পৌঁছেছে। এ অবস্থায় স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চাওয়া বোকামি। দরকার সকলের দায়িত্বশীলতা। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সবই সম্ভব।