স্বাগত পবিত্র মাহে রমজান

 

আজ পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম দিন। দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা গতরাতে তারাবি নামাজ আদায় করেছেন। সেহরি খেয়ে রোজার নিয়ত করেছেন। এভাবে এ বছরেও রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস রমজানের শুভ যাত্রা শুরু হলো।পবিত্র মাস এলেই দেশে এক অভূতপূর্ব সাড়া পড়ে যায়। পাক-পবিত্রতা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তোলা হয়। ধর্মপ্রাণ মানুষের আবেগ ও উচ্ছ্বাস বহুগুণে বেড়ে যায়।বিশেষ করে ইফতার, তারাবিহ্ (কিয়ামে রমজান) ও সেহরির সময় পুণ্যবান মানুষেরকোলাহলেমুখরিত হয় চতুরদিক। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন শরিফে বলেছেন, ফামানশাহিদা মিনকুমুশ শাহরা ফালইয়াসুমহু অর্থাত তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিরমজান মাসে উপস্থিত থাকবে, তার জন্যই রোজা ফরজ বা অবশ্য পালনীয় (০২:১৮৫)। তবে যারা খুবই অসুস্থ ও মুসাফির তাদের জন্য কিছুটাশিথিলযোগ্য। তারা অন্য সময়ে রোজা রাখতে পারবেন বা বিধি অনুযায়ীব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। কেননা ইসলামের বিধি-বিধানগুলোতে কোনো জটিলতা নেই, বরং আছে সহজকরণের ব্যবস্থা। কাজেই রোজা রাখারবিষয়ে মুসলমানদের আরকোনো অজুহাতই চলে না।

সিয়াম সাধনা বা রোজা পালনের মূল উদ্দেশ্যহলো- তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জন। সুরা বাকারার ১৮৩ নং আয়াতে এউদ্দেশেরকথা উল্লেখ রয়েছে। মহান আল্লাহর প্রতি প্রীতি বা ভালোবাসা না জন্মালে এগুণ অর্জন করা সম্ভব নয়। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রোজার আলাদা একটিবৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। সারাদিন পানাহার ও জৈবিক চাহিদা থেকে বিরত থাকতে হয়বলেইএতে লোক দেখানোর অবকাশ কম। আল্লাহ পাক বলছেন, রোজা কেবল আমারসন্তুষ্টির জন্যই রাখা হয়। তাই এর পুরস্কারও আমি নিজ হাতে দেব। তাছাড়াবিশ্বমানবতার আলোকবর্তিকা ‘কুরআনুল কারীম’ নাজিলের মাস রমজানের গুরুত্বসর্বাধিক। অন্যান্য আসমানি কিতাবও এই মাসে অবতীর্ণ হয়েছে। একজন রোজাদারকখনও পাপাচারে লিপ্ত হতে পারেন না, মিথ্যা ও অশ্লীল কথা বলতে পারেন না, কারও সাথে ঝগড়া-ঝাটি করতে পারেন না ইত্যাদি। এজন্য হাদিসে সিয়ামকেঅন্যায়-অপকর্ম থেকে আত্মরক্ষার ঢাল হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। এ প্রসঙ্গেরাসূল আকরাম (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায়রোজা রাখে, তার অতীত গুনাহ-খাতা মাফ হয়ে যায়। সে শিশুর মতো মাসুম বানিষ্পাপ ব্যক্তিতে পরিণত হয়।’

প্রকৃতপক্ষে সিয়াম সাধনা হচ্ছে একটিবিশেষ ট্রেনিং বা প্রশিক্ষণ। এর মাধ্যমে রোজাদারের জীবন-যাপন সুশৃঙ্খলিতহয় ও বাকি মাসগুলোও আল্লাহর পথে চলার জন্য সহায়ক হয়। এ মাসের কঠোরপরিশ্রম ও কৃচ্ছ্রতা সাধনের দ্বারা একজন মুসলিম ব্যক্তিগত জীবনেও সাফল্যঅর্জন করেন। তাছাড়া রোজার চিকিত্সাগত তাত্পর্যও সীমাহীন। আমাদের দেহেরবেশিরভাগ রোগ সৃষ্টির কারণ প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ। একসমীক্ষায় দেখা গেছে যে, গ্রহণ করা খাদ্যের শতকরা ২৫ ভাগ বা তারও অধিকঅপ্রয়োজনীয়। তা রোজার সময় পরিপাকতন্ত্র যে অবসরটুকু পায় তাতে দেহেরঅপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের সারাংশ ও সঞ্চিত বিষাক্ত রস নিঃশেষ হয়ে যায়।দেহের বাড়তি ওজন, রস, চর্বি ইত্যাদি হ্রাস পায়। ক্ষুধামন্দা, পেটফাঁপা, টকঢেঁকুর, লিভারের দুর্বলতা প্রভৃতি রোগের নিরাময় হয়। এজন্য জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, স্পেন, হল্যান্ড প্রভৃতি দেশে চিকিত্সা ব্যবস্থাপত্রেপ্রতিবিধান হিসেবে উপবাসের উল্লেখ করা হয়। রোজা যদিও উপবাসনয়, তথাপি রোজাদারগণ সাধারণতএরকম শারীরিক উপকার হতে বঞ্চিত হন না। পবিত্র রমজান আমাদের মাঝে আসে আত্মশুদ্ধিরও বারতা নিয়ে।

পবিত্র রমজানমাসের যেকোনো ইবাদত-বন্দেগীতে অন্য মাসের চেয়ে সওয়াব বেশি হয়। অতএব, এইএকটি মাসে বেশি বেশি নেক আমল করা বাঞ্ছনীয়। রমজান উপলক্ষে কুরআন তেলাওয়াত ওতার মর্ম উপলব্ধিতে সময় দেয়া প্রয়োজন। দ্বীনি দাওয়াতের কাজে আঞ্জামদেয়াও একান্ত কর্তব্য। অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, বেপর্দা ইত্যাদি সবসময়ইপরিত্যাগ করা প্রয়োজন।তবে এই মাসে এটা আরও প্রত্যাশিত। এ মাসে দিনের বেলাপ্রকাশ্যে পানাহার বেমানান ও দৃষ্টিকটু। দেখা যায়, রমজান মাস এলেইদেশ জুড়ে লাগামহীন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, লোডশেডিং, জাকাতের কাপড় বিতরণ নিয়ে হতাহতইত্যাদি। যা অনাকাঙ্ক্ষিত। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ওসকলকেবাড়তি সতর্ক হওয়া দরকার।সর্বোপরি এতিম-অসহায় ও দুস্থ লোকদেরসহায়তায় সকলকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সহিহ্সালামতে পূর্ণ এক মাস সিয়াম পালনের তওফিক দিন। আমিন।