স্বাগতম নববর্ষ ১৪২২ : সকলকে প্রীতি ও শুভেচ্ছা

আজ পয়লা বোশেখ। ১৪২২ বাংলা সনের প্রথম দিন। বঙ্গাব্দের সূচনা লগ্ন যেমনই হোক, তা কালক্রমে পয়লা বোশেখ আবহমান বাংলার প্রিয় অতিথি ও বাঙালির প্রাণের উত্সবে রূপান্তর হয়েছে। নববর্ষের নতুন প্রভাত আজ নবজীবনের বারতা নিয়ে এসেছে বাঙালির ঘরে ঘরে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশজুড়ে জাগিয়েছে প্রাণের স্পন্দন। দুঃখ-গ্লানি, বেদনা-ব্যর্থতা, হতাশা-হাহাকার, দুর্যোগ-দুর্বিপাক, সহিংসতা-অস্থিরতা সব পশ্চাতে ফেলে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনের আশায় প্রাণের গভীর আবেগে উদ্বেল যেন সবার মাঝে। সকলকে নববর্ষের শুভেচ্ছা।

বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও নাগরিক জীবনের এবং সরকারি কর্মকাণ্ডের প্রায় সবই চলে ইংরেজি ক্যালেন্ডারের হিসাব অনুযায়ী, তবুও বাঙালি মননের গভীরে ময়ূরাসন পেতে অবস্থান করে বাংলা নববর্ষ। বাংলার কৃষক ও বাংলাদেশের প্রান্তজন এখনও বাংলা মাসের হিসাব ধরেই জমির জো তোলেন, বীজ বোনেন, ঘরে তোলেন ফসল। বাংলা মাসের হিসেবেই আবর্তিত হয় ষড়ঋতু। যুগ যুগ ধরে দেশের চাষি, মজদুর, কামার-কুমোর, তাঁতি-জেলে নানা পেশার মানুষ বাংলা নববর্ষকে বরণ করে আসছে নানা উত্সব-আয়োজনের মধ্যদিয়ে। বাংলা নববর্ষে এখনও বিশেষত গ্রামবাংলার ব্যবসায়ীরা হিসাবের নতুন খাতা খুলে থাকেন, হালখাতা করেন। বোশেখের প্রথম দিনে হাজার বছর ধরে গ্রাম-গ্রামান্তরে, নদী পাড়ে, বটের তলায় বসানো হয় মেলা। এ বোশেখি মেলা বাঙালির প্রাণের মেলায় রূপ নেয়। বাংলাদেশে এই একটি মাত্র উত্সব হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান এবং উপজাতি গোষ্ঠী সকলে মিলে উদযাপন করেন অনাবিল আনন্দে।
পৃথিবীর অনেক জাতির নিজস্ব কোনো নববর্ষ নেই। সম্রাট আকবর খাজনা আদায়ের নিমিত্তেই মূলত বাংলা সন প্রবর্তন করে দিয়ে গেছেন বাঙালির নববর্ষ। নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, বাংলা সনের উত্পত্তি হয়েছে এ দেশের মানুষের জীবনধারা এবং প্রকৃতির বিচিত্রতার নিরিখে। প্রধানত ফসলের মরসুম চিহ্নিতকরণ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে মুসলিম শাসনামলে বাংলা পঞ্জিকার প্রবর্তন করা হলেও এটা এখন মিশে গেছে সমগ্র জাতির অস্থিমজ্জায়। চৈত্রে রবিশস্য, বোশেখে বোরো ধান, জ্যৈষ্ঠে পাকা আম-কাঁঠাল, আষাঢ়-শ্রাবণে ঘনঘোর বরিষা ও নদী জল ছল ছল, শরতে কাশবনে বাতাসের দোলা, অঘ্রাণে নবান্নের উত্সব, পৌষে পিঠাপুলির ধুম, মাঘে কনকনে শীত- এসবই আমাদের লোকায়ত জীবনধারার অতি পরিচিত অনুষঙ্গ। প্রকৃতিতে বোশেখ আসে কালবোশেখির আশঙ্কা সাথে নিয়ে। কিন্তু বাঙালি জীবনে বোশেখ আসে জীবন সংগ্রামের অফূরান প্রেরণা সঞ্চারিত করে। ইতোমধ্যে নানা পরিবর্তন, অর্জন আর অনার্জনের মধ্যদিয়ে আমরা পার করেছি ১৪২১ সন। পেট্রোলবোমায় মানুষ হত্যা, অপহরণের পর নিখোঁজসহ নানা ঘটনার মধ্যেই কেটেছে বছর। শেষ দিকে অবশ্য কিছুটা স্বস্তির আবহ পরিলক্ষিত হচ্ছে।
বস্তুত বাংলা নববর্ষ যেমন সুর ও সঙ্গীতের, মেলা ও মিলনের ও আনন্দ অবগাহনের, তেমনিই সাহস ও সংকল্পেরও। নতুন প্রতিজ্ঞা ও প্রত্যাশায় বুক বাঁধার দিন আজ। এখন মানুষ চায় শান্তি, সম্প্রীতি সংহতি ও স্বস্তি। চায় সুশাসন, শৃঙ্খলা, নির্ভয়, স্থিতিশীলতা ও মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা। আমাদের অন্তর বিকশিত ও সুন্দর হোক, নববর্ষের সকালে এটাই আমাদের ঐকান্তিক প্রার্থনা। এ উত্সবমুখর দিনে কামনা করি সকলের সুখ ও সমৃদ্ধি। নববর্ষ ১৪২২ উপলক্ষে সকলকে জানাই প্রীতি ও শুভেচ্ছা। শুভ নববর্ষ।

পুনশ্চ: শুধু ইলিশ পান্তার মধ্যে বাঙালি আনা না খুঁজে বাংলাকে আগলে রাখার সংস্কৃতি শ্রেয়।