স্বর্ণের মূর্তি নিয়ে প্রতারণা : প্রতারকচক্রের একটির মুখোশ উন্মোচন

স্বর্ণ, মূল্যবান ধাতু। এ ধাতু যার কাছে যতো বেশি সে ততো ধনী-বহুযুগ আগে থেকেই এ রেওয়াজ বিশ্বের বেশিরভাগ সমাজেই বিদ্যমান। আমাদের সমাজ তারই অন্তর্ভুক্ত। ফলে স্বর্ণ পাওয়ার স্বপ্ন অধিকাংশের মধ্যেই কমবেশি আছেই। আর এই স্বপ্ন পূরণের লোভ দেখিয়ে কয়েক প্রকার প্রতারক প্রতারণার ফাঁদ পেতে সরলসোজা বহু মানুষকে সর্বশান্ত করে ছাড়ে। প্রতারিত হয়ে অনেকেরই পথে বসতে হয়। আর প্রতারকচক্র? এ চক্রের সদস্যরা আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যায়। যার একটির মুখোশ জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন সবে খুলতে শুরু করেছে। একজন ধরাও পড়েছে। উদ্ধার হয়েছে প্রতারণা করার কাজে ব্যবহৃত স্বর্ণবর্ণের একটি মূর্তি।
অল্প টাকায় অনেক ওজনের সোনার মূর্তি কিংবা সোনার মূর্তিটি মোটাঅঙ্কের বিনিমিয়ে নিজের বাড়িতে কিছুদিন রাখতে পারলে লগ্নিকৃত অর্থের কয়েকগুন বেশি টাকার মালিক হওয়ার লোভ দেখিয়ে প্রতারণার পাশাপাশি জ্বিনের বাদশা সেজে সেলফোন তথা মোবাইলফোনেও প্রতারণা করছে বহু প্রতারক। ওই প্রতারকদের অনেকেই স্বর্ণবর্ণের মাটির মূর্তি গোচিয়ে দিয়ে কাড়ি কাড়ি টাকা হাতিয়ে নেয়ার উদাহরণও রয়েছে আমাদের সমাজে। শেষ পর্যন্ত প্রতারিত ব্যক্তি যখন জানতে পারেন ওটা সোনালি রঙ করা, ওটা মাটির মূর্তি, তখন তার কী দশা হয় বোদ্ধাদের নিশ্চয় নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার সুবুলপুর এলাকায় স্বর্ণমূর্তি নিয়ে সঙ্গবদ্ধ দলটি দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিলো বলে জানিয়েছে প্রশাসনসূত্র। পুলিশের গোয়েন্দা রয়েছে, রয়েছে সিআইডি বিভাগও। না, পুলিশের গোয়েন্দা ওই স্বর্ণমূর্তি নিয়ে প্রতারণা করা চক্রের সন্ধান পায়নি, পেয়েছে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা। উদ্ধারকৃত মূর্তিটি ব্রোঞ্জের এবং তার ওপর স্বর্ণের প্রলেপ দেয়া বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এ চক্র স্বর্ণের মূর্তিটি নিজেদের মধ্যে হাত বদলের আড়ালে সরলসোজা সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছিলো বলে অভিযোগ। প্রতারিত হয়েও অনেকে লোভের টোপে পড়ার বিষয়টি লোক লজ্জার ভয়ে মুখ খোলেন না বলেই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতারকচক্র পার পার পেয়ে যায়।
একের পর এক অভিন্ন কৌশলে প্রতারণার ঘটনা ঘটলেও সমাজের যারা সতর্ক না হয়ে লোভের টোপে পড়েন তাদের জন্যই প্রতারকচক্র দিনের পর দিন জিইয়ে থাকে। সমাজের সকলে সচেতন হলে, লোভের টোপ বর্জনের মতো মানসিকতা গড়তে পারলে প্রতারকচক্র থাকবে না। এ জন্য দরকার সমাজে সচেতনতার আলো। অস্বাভাবিক প্রস্তাব কিংবা কোনো অস্বাভাবিকতা থেকে দূরে থাকতে না পারলে প্রতারকচক্র সুযোগ নেবে। মনে রাখতে হবে আশেপাশেই প্রতারক ঘুর ঘুর করছে, অভিনব কৌশলে বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে প্রতারণার সুযোগ খুঁজচ্ছে ওরা। প্রতারক ওই চক্রের একটির যখন মুখোশ খুলেছে, সন্ধান মিলেছে তখন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে সমাজ উপকৃত হবে।