সুস্থ মানসিকতা ও সুষ্ঠু পরিবেশ বিকাশের দায়িত্ব সকলেরই

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে মা ও তিন মেয়েকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। অভিযোগ, নবম শ্রেণির ছাত্রী মনিরাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলো জাহাঙ্গীর নামের এক যুবক। প্রত্যাখ্যানের কারণেই জাহাঙ্গীর পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে মা ও তার তিন মেয়েকে হত্যা করেছে। মনিরাকে বিয়ের জন্য জাহাঙ্গীর চাপ সৃষ্টি করলে একাধিক সালিসও হয়। সালিসে জাহাঙ্গীরকে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং একটি স্বর্ণের আংটি ফেরত দিয়ে মীমাংসা করতে হয়। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা- বিচারের পর প্রতিশোধ নিতে জাহাঙ্গীর এ নৃশংস অপকর্ম করেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তাকে ধরতে পারেনি পুলিশ। আত্মগোপন করেছে। তার পরিবারের সদস্যরাও জনরোষের শঙ্কায় অজানা ঠিকানায়।

 

বিয়ের প্রস্তাব পছন্দ না হলে প্রত্যাখ্যান করার অধিকার সকলেরই রয়েছে। এটা জগতের এমন একটি নিয়ম যেখানে জোর-জবরদস্তির সুযোগ নেই। হৃদয়শক্তির ব্যাপার, পেশীশক্তি প্রয়োগ বা প্রদর্শনের নয়। এরপরও এ সংক্রান্ত নানা ঘটনা এ উপমহাদেশের মানুষের যেনো অজ্ঞতা, অসভ্যতা ফুটে ওঠে। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের কারণে কথিত হৃদয়াকাঙ্ক্ষী প্রেমিক হৃদয়বিদীর্ণ কর্ম করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। পানিপ্রার্থীকে উচিত শিক্ষা দিতে মেরে আহত করতে পারে, যেমনটি অক্টোবরের শুরুতে ঘটিয়েছে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় সোহেল নামের এক কথিত প্রেমিক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ছুরিকাঘাতেরও খবর সম্প্রতি পত্রিকায় পাতায় উঠে এসেছে। গত জুলাই মাসে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলায় বহড়া গ্রামে জবাইয়ের মতো নৃশংসতাও গোপন থাকেনি। মেয়ের বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার কারণে গুলি করে খুন? মাঝে মাঝেই তো হচ্ছে। আর মাইক্রোবাস চাপা দিয়ে মাকে হত্যা করে মেয়েকে অপহরণেরও ঘটনা ঘটছে সমাজে। সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গার দর্শনাও এ ধরনের ঘটনার সাক্ষী হয়েছে। এরকম অসংখ্য উদাহরণ সমাজের দায়িত্বশীল ও অভিভাবকদের উদাসীনতারই কি সাক্ষ্য দেয় না? আলবত।

 

কেন এই মানসিক বিকারগ্রস্ততার মধ্যে যুবসমাজ? সামাজিক অর্থনৈতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নৈরাজ্যের একটি প্রভাব কি রয়েছে এই ধরনের অপকর্ম করা মানসিকতার গভীরে? আইনের শাসন যদি কোনো অঞ্চলে কাজির গোয়ালের গরুর মতো অদৃশ্য বা অস্পষ্ট থাকে তবে এ ধরনের নানা অঘটন বৃদ্ধি পায়। প্রকৃত শিক্ষিত জনগোষ্ঠী সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক বিকাশসাধনের মাধ্যমেই ঘোচানো সম্ভব এই মানসিকদীনতা। তা না হলে যুবমনের নৃশংস দানব বের হয়ে আসবে দানবীয় অনুকূল পরিবেশে। সুষ্ঠু পরিবেশ বিকাশের দায়িত্ব আমাদের সকলেরই। যাদেরকে বখাটে বলা হয় তাদের সুধরে সুপথে রাখার দায়িত্ব অবশ্যই সমাজের সকলের।