সুষ্ঠু প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশ শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে সহায়ক

মেধা যাচাইয়ের প্রতিযোগিতায় অঞ্চলভিত্তিক ভালো-মন্দ ফল লক্ষণীয় হলেও ভৌগলিক অবস্থান সর্বক্ষেত্রে মূখ্য নয়। বিশেষ করে আমাদের দেশের আবহাওয়া-প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে অঞ্চলভিত্তিক মেধার ফারাক তেমন মেলে না। তাহলে চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরের শিক্ষার্থীরা মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় তথা মেধা প্রতিযোগিতায় অন্যদের তুলনায় পিছিয়ে কেন? এবারের ভর্তির ফলাফল খানেকটা হতাশার বটে। অবশ্য সব সময়ই যে হতাশ করছে তা নয়, কোনো কোনো বছরের হতাশাজনক ফল শিক্ষানুরাগী অভিভাবকমহলকে ভাবিয়ে তোলে বৈকি?

 

এবার মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তুলনামূলকভাবে ভালো হয়েছে। ভালো হওয়ার কারণে অনেকের কপাল পুড়েছে বলেও কেউ কেউ মন্তব্য করছেন। জনশ্রুতি রয়েছে, যারা অর্থের বিনিময়ে কিছু প্রশ্ন জেনে ছেলেমেয়েকে প্রস্তুত করেছিলেন তারা বাড়তি সুযোগ পাননি। সহজ প্রশ্নের বদৌলতে যোগ্যরাই ভর্তির যোগ্যতা অর্জনে সফলকাম হয়েছে। অবশ্য অর্থ এবং কিছু প্রশ্ন জানা না জানার বিষয়টির সত্যতা যাচাই শুধু কঠিনই নয়, অসম্ভবও। কারণ ওসব তো আর প্রকাশ্যে হয় না, আড়ালে আবডালে। সংশ্লিষ্টরা কি আর তাদের অন্যায় স্বীকার করবে? প্রতিবারই অনিয়মের নানা গুঞ্জন ওঠে। গুঞ্জন গুজব নয়, মেধা যাচাইয়ের পরীক্ষায় টিকতে হলে ভালো প্রস্তুতি নিতে হয়। সেই প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজন প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশ, পরিবারের সহযোগিতাসহ নিজের সদ্দিচ্ছা।

 

দেশে জনসংখ্যা যে হারে বাড়ছে সে হারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাড়ছে না। ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা তো ক্রমশ খাটো হচ্ছে। সরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে তুলনামূলকভাবে সীমিত সংখ্যক শিক্ষার্থী। সরকারি মেডিকেল কলেজে পড়িয়ে একজনকে চিকিৎসক করতে হলে দেশবাসীর অনেক ভর্তুকি দিতে হয়। আর বেসরকারি মেডিকেলে? সেখানেও আসন সংখ্যা চাহিদা অনুপাতে খুবই কম। সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে মেধার ভিত্তিতে ভর্তির সুযোগ দেয়ার পাশাপাশি এখন বেসকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে শুধু টাকাই গুনতে হয় না, মেধাতালিকাতেও থাকতে হয়। তা না হলে ভর্তির সুযোগ অধরাই থেকে যাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরের শিক্ষার্থীদের অনেকেই মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিয়েও তড়া পাচ্ছে না সিংহভাগ। কেন? তবে কি মেধায় কমা? নাকি মেধা যাচাই পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতিত্ব দেখানোর মতো প্রস্তুত হতে না পারা?

 

মেধা আছে, মেধায় প্রয়োজন মতো শান দেয়া হচ্ছে না। শুধু টিকবো ভেবে পরীক্ষায় অংশ নিলে টেকা না টেকার বিষয়টি থাকে, আর যদি প্রথম হওয়ার মতো প্রস্তুতি নেয়া যায়? যারা মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ পান তারা কম মেধাবী নয়। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো ফল করলেই কেবল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ মেলে। তাহলে মেধা যাচাইয়ের চূড়ান্ত পর্বে হতাশার জন্য প্রস্তুতিতে ঘাটতি থাকছে বলেই কি হতাশ হতে হচ্ছে না। সুষ্ঠু প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশ অবশ্যই শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে সহায়ক। সেটাই কাম্য।