সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে তেলবাহী জাহাজ ডুবি এবং

 

পূর্ব সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে জ্বালানি তেলবাহী একটি জাহাজ ডুবে অন্তত সাড়ে তিন লাখ লিটার ফার্নেস তেল ছড়িয়ে পড়ায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও পরিবেশ বিপর্যয় রোধে তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের খবর পাওয়া যায়নি। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে সুন্দরবন। হুমকিতে ইরাবতি ডলফিন।

ভারত-বাংলাদেশ নৌ প্রটোকল রুট এবং দক্ষিণাঞ্চলের সাথে দেশের নৌবাণিজ্য যোগাযোগ পথ হিসেবে ব্যবহৃত ঘষিয়াখালী চ্যানেল, মংলা নালা ও রামপালের কুমার নদ প্রায় তিন বছর ধরে বন্ধ থাকায় সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে শ্যালা নদীকে বিকল্প পথ হিসেবে ব্যবহার করছে বিআইডব্লিউটিএ। শুরুতে বনের ভেতর দিয়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ২০টি বড় পণ্যবাহী জাহাজ ও তেলবাহী ট্যাঙ্কার চললেও এক বছর ধরে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২৫০টি জাহাজ চলাচল করছে। কিছুদিন আগে সিমেন্টের কাঁচামাল নিয়ে দুটি জাহাজ পশুর চ্যানেলে ডুবে গেছে। জাহাজ দুটি উদ্ধার করা যায়নি। এতো তেল পানিতে ভেসে থাকায় উপকূলীয় জীববৈচিত্র্যের ওপর মারাত্মক ও দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়বে। সুন্দরবনের গাছপালা মূলত শ্বাসমূল দিয়ে শ্বাস গ্রহণ করে। তেলের আস্তরণ জোয়ারের সময় মাটির ওপর বিস্তৃত হয়ে গাছের শ্বাস-প্রশ্বাস বাধাগ্রস্ত করায় অনেক গাছ মারা যাবে।

অন্যদিকে পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় মাছসহ জলজ প্রাণীরা অক্সিজেনজনিত সমস্যায় পড়বে। বস্তুত সুন্দরবনের ভেতরে তেলবাহী জাহাজ ডুবির এ ঘটনা বনটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পরিবেশগত বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। বিশ্বের বৃহত্তম এ ম্যানগ্রোভ বনের এমন পরিবেশ বিপর্যয় কোনোভাবেই কাম্য নয়। এক দশকে সুন্দরবন এলাকায় লবণাক্ততা বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, জলবায়ু পরিবর্তন ও লবণাক্ততার প্রভাবে আগামী দুদশক নাগাদ সুন্দরবন থেকে সুন্দরী গাছ বিলীন হয়ে যেতে পারে। দেশের অন্তত ৪০ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভরশীল। কাজেই তেলবাহী জাহাজডুবির ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি দ্রুত কমিয়ে আনাসহ ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।

তেল ধীরে ধীরে বিশাল এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়লেও তা অপসারণ বা নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা বনবিভাগ, মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ অথবা সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরের কাছে নেই। ফলে পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। ভাসমান তেলের আস্তরণ ভারী ও একত্র করার মতো রাসায়নিক দ্রব্য সংগ্রহ করে বিপর্যয় রোধে আন্তরিকতা প্রয়োজন।