সুনাম অক্ষুণ্ণ থাকেনি বলেই কি বাদ দিতে হবে?

 

দেশের আভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস দমনের উদ্দেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে২০০৪ সালের ২৬ মার্চ গঠিত হয় চৌকস ৱ্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (ৱ্যাব)।একই বছর ১৪ এপ্রিল তাদের কার্যক্রম শুরু হয়। বাংলাদেশ পুলিশ, বাংলাদেশসেনা,নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে গঠিত ৱ্যাব দেশে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখার কাজে সাড়া ফেলে। উদাহরণ সৃষ্টি করে। সেই সুনামে অক্ষুণ্ণ থাকেনি। কিছু সদস্যের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য ৱ্যাব’র কার্যক্রম সীমিত করা কতোটা যুক্তিযুক্ত? দু একজনের নৈতিকতা স্খলনের খেসারত কেন গোটা দেশবাসীকে দিতে হবে?

সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি,ছিনতাই,টেন্ডারবাজি ও মাস্তানিতে অতিষ্ঠ মানুষ ৱ্যাবের কার্যক্রমকে সমর্থন জানায়।ৱ্যাব সফল হয় জঙ্গিবাদ দমনেও। ২০১১ সালের ২৩ মার্চ ঝালকাঠি জেলার সুতুরিয়াগ্রামে নিরপরাধ লিমনের পায়ে গুলি করে পঙ্গু করার ঘটনায় ৱ্যাব আলোচিত হয়।একই বছর ৪ নভেম্বর চট্টগ্রামের তালসরা দরবার শরিফে তল্লাশির নামে ২ কোটি ৭হাজার টাকা লুট করেনৱ্যাবের বিপথগামী কিছু সদস্য। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জেরসাত খুনের ঘটনায় ৱ্যাবেব তিন কর্মকর্তার নাম জড়িত হওয়ার পর থেকেই ৱ্যাবেরকার্যক্রমে লাগাম টেনে ধরে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু একটি বিষয় মাথায় রাখাপ্রয়োজন,এ কাজগুলো ছিলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ও কতিপয় সদস্যের কাজ। যার জন্যসমগ্র বাহিনীর কার্যক্রম সীমিত করা হয়। সীমিত করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। কিছু সদস্যের অনৈতিক কাজের দোষারোপ গোটা বাহিনীর ওপর করা অমূলক। সীমিতকরণের পর থেকেৱ্যাবের যে অনুপস্থিতি চলছে তাতে অপরাধ প্রবণতা আবার মাথাচাড়া দেয়ার আশঙ্কা পদে পদে। চুয়াডাঙ্গায় স্থান না পেয়ে ৱ্যাবের ক্যাম্প গুটিয়ে নেয়ার পর সচেতনমহল থেকে ৱ্যাব ক্যাম্প পুনঃস্থাপনের দাবি রয়েছে। কেন? ৱ্যাব সচেতনমহলের আস্থা অর্জন করেছিলো বলেই নিশ্চয়!

ৱ্যাব গঠন করা হয় বিএনপি-জামায়ত জোট সরকারের সময়।সেসময় ব্যাপকভাবেঅপরাধপ্রবণতা বেড়ে যায়। ৱ্যাব গঠনের আগে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের নেতৃত্বেচালানো হয়েছিলো‘অপারেশন ক্লিন হার্ট’ নামে এক দুঃসাহসিক অভিযান। তাদের হাতে‘নিরাপত্তা হেফাজতে’ মৃত্যুর নামে চুয়াডাঙ্গার একজনসহ ৫৮ ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে। কর্তৃপক্ষঅবশ্য সে সময় বলেছিলো,তাদের মৃত্যু হয়েছে হার্ট অ্যাটাকে। নাগরিক সমাজের তীব্রপ্রতিবাদের মুখে সরকার একপর্যায়ে অপারেশন ক্লিন হার্ট বন্ধ করে ওই অভিযানেঅংশগ্রহণকারী সামরিক বাহিনীর সদস্যদের বিচার করা যাবে না বলে জাতীয় সংসদেদায়মুক্তি দেয়। এর পরে ৱ্যাব গঠন ও ক্রসফায়ার ঘটনা ঘটতে থাকে। কিন্তুতারপরও ৱ্যাবের কার্যক্রমের প্রতি মানুষের কিছুটা আস্থা ছিলো। আস্থা রয়েছেও। আস্থাহীনতা সৃষ্টির অন্যতম কারণ বোধ করি জবাবদিহিতায় ঘাটতি।

বর্তমানেদেশের ১৬ কোটি মানুষের নিরাপত্তায় পুলিশের সংখ্যাএকেবারেই অপ্রতুল। বাংলাদেশে ১ হাজার ১৭০ জনের বিপরীতে একজন পুলিশ কাজ করে।অন্যদিকে ভারতে ১৭৫নাগরিকের বিপরীতে একজন,পাকিস্তানে ৩১৩ জনের বিপরীতেএকজন,নেপালে ২১৭ জনের বিপরীতে একজন,ভুটানে ১১৩ জনের বিপরীতে একজন,মালয়েশিয়ায় ২৪৯ জনের বিপরীতে একজন,জাপানে ১৪৩ জনের বিপরীতে একজন এবংআমেরিকায় ২১৫ জনের বিপরীতে একজন পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে। পুলিশসদর দফতরের তথ্যমতে,সারাদেশে পুলিশ সদস্যের সংখ্যা ১ লাখ ৫৪ হাজার। এরমধ্যে ছয়টি মেট্রোপলিটন এলাকায় ৯০ হাজার পুলিশ সদস্য কাজ করছে। বাকি ৬৪হাজার পুলিশ সদস্য সারাদেশে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে। এবিরাটজনসংখ্যার নিরাপত্তা দিতে অল্পসংখ্যক পুলিশ সদস্যের পক্ষে সম্ভব নয়। তাইৱ্যাব গঠন ছিলো প্রাসঙ্গিক।

একটি শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে কিছুঅসাধু ব্যক্তি থাকতে পারে। তাদের খারাপ কার্যক্রমের জন্য গোটা বাহিনীকেদোষারোপ করা ঠিক নয়। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে ৱ্যাবকে সক্রিয় করাউচিত। বিশেষ করে ঈদ মরসুমেআইনশৃঙ্খলা পুলিশের পাশাপাশি ৱ্যাব’র টহল জোরদার করা না হলে পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে পড়তে পারে। এ আশঙ্কা অমূলক নয়। ৱ্যাবের কার্যক্রমে আরও গতি আনাপ্রয়োজন। তবে তাদের কার্যক্রমে জবাবদিহিতা থাকতে হবে।দোষীর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, সে যেখানে যে পর্যায়েরই হোক। এটি নিশ্চিত করতে পারলে তার সুফল দেশবাসীই ভোগ করবে।