সিটি করপোরেশন নির্বাচন

দেশের বড় দুটি মহানগরীতে নগরপিতা নির্বাচনের জোর হাওয়া বইতে শুরু করেছে। সবাই আশা করছেন আন্দোলনরত বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় বিরোধী জোটও এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। কারণ এর আগে অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনগুলোতে তারা অংশ নিয়েছে এবং বিভিন্ন সিটিতে মেয়র পদে তাদের প্রার্থীরা জয়ীও হয়েছেন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের সভা-সমাবেশ ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা সৃষ্টির প্রতিবাদে গত ৫ জানুয়ারি থেকে দেশব্যাপি লাগাতার হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি পালন করে আসছে জোটটি। তাদের অনির্দিষ্টকালের কর্মসূচির কারণে দেশে এক অনাকাঙ্ক্ষিত অচলাবস্থা চলছে। এ অসহনীয় অনির্দিষ্ট কর্মসূচির চাপে কেবল দেশের সাধারণ মানুষই কষ্ট পাচ্ছেন তা নয়, বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জোটের বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীরাও। এ অচলাবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বিকল্প পথের অনুসন্ধান ছাড়া গত্যন্তর নেই।

গণতন্ত্র মূলত নমনীয় শাসনব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় চরমপন্থা অবলম্বনের কোনো অবকাশ নেই। এটা ক্ষমতাসীন শাসক শ্রেণি ও সরকারের জন্য যেমন প্রযোজ্য, তেমনি প্রযোজ্য বিরোধী জোটের আন্দোলনকারীদের জন্যও। বর্তমান ক্ষমতাসীন দল এবং আন্দোলনরত বিরোধী দল নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানোত্তর বিভিন্ন মেয়াদে দেশ পরিচালনার গুরুদায়িত্ব পালন করেছে। গণতন্ত্রের উপর্যুক্ত ছবক তারা ভালোভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম, তাতে সন্দেহের কারণ নেই। তা সত্ত্বেও গত ২৫ বছরের গণতান্ত্রিক জমানায় বারবার অচলাবস্থার কবলে পড়েছে দেশ ও দেশের মানুষ। সাম্প্রতিক অচলাবস্থা তারই আরেকটি উদাহরণ বটে। এ অচলাবস্থা উত্তরণে আশার আলো দেখা যাচ্ছে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ায়। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিএনপি জোট নির্বাচনে আসবে বলে।

আমরাও মনে করি, এ নির্বাচনে বিরোধী জোটের অংশগ্রহণ করা উচিত। যেমন গণতান্ত্রিক শাসনকে অর্থবহ করতে, তেমনি গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে যৌক্তিক পরিণতির লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। তবে বলাই বাহুল্য, সে নির্বাচন হতে হবে অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ। নির্বাচনের সেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরির দায়িত্ব উভয় পক্ষের।

বিএনপি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও সিটি করপোরেশন, উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। সেসব নির্বাচনের ফলাফল জোটটির পক্ষে অনেকটাই ইতিবাচক বলে প্রতিভাত হয়। সেই ধারায় জোটটির উচিত নির্বাচনমুখী আন্দোলনের মাধ্যমে এগিয়ে চলা। নরম পন্থার আন্দোলনের ভেতর দিয়ে নমনীয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বিনির্মাণই হওয়া প্রয়োজন দেশের রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর অন্যতম মূল লক্ষ্য ও আদর্শ। এর পরিবর্তে চরমপন্থা অবলম্বনের ফলে বারবার ব্যাহত হচ্ছে গণতন্ত্রের অভিযাত্রা। এসব বিভ্রান্তি থেকে বের হয়ে আসা প্রয়োজন জনগণ ও দেশের মঙ্গলের স্বার্থে। লক্ষ্য যদি হয় দেশের মানুষের মঙ্গল, তবে দেশের মানুষের সম্মিলিত অংশগ্রহণের, মতপ্রকাশের, মত প্রদানের পরিবেশকে সুনিশ্চিত করতে হবে। সেই পরিবেশ রচনার দায়িত্ব সরকারের, বিরোধী দলের এবং সব নাগরিকেরও। বিএনপির লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের দাবি-দাওয়া মেনে নিয়ে সরকার অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে এটাই কাম্য।