সামান্য ত্রুটি কিংবা ঘাটতি বড় অর্জনকেও ম্লান করে

‘ওষুধটা দ্রুত দিতে পারলে শাশুড়ির হয়তো অকালমৃত্যু হতো না’ এই হয়তো যুক্ত দীর্ঘশ্বাস সারাটা জীবনই বয়ে বেড়াতে হবে দায়িত্বশীল পুত্রবধূ সুমিকে। গতপরশু বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শাশুড়ি সালমা খাতুনের জন্য বাইরে থেকে ওষুধ কিনে ভেতরে প্রবেশের সময় বাধাপ্রাপ্ত হন সুমি। জরুরি ওষুধ নিয়ে অসুস্থ শাশুড়িকে এখনই দিতে হবে, কালবিলম্বে ক্ষতি হতে পারে এসব বলে অনুনয়-বিনয়ে কাজ না হলে তিনি চিৎকার চেচামেচি জুড়ে দেন। শেষ পর্যন্ত শাশুড়ির কাছে পৌঁছে দেখেন অবস্থা বেগতিক। সেবিকাকে ডেকে চিকিৎসক তলবে বারবার অনুরোধ জানিয়েও নাকি কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত ওয়ার্ডেই কর্তব্যরত চিকিৎসক সুমির শাশুড়িকে মৃত বলে ঘোষণা দেন। ঘটনার বিবরণ শুনে উত্তেজনা দানা বাঁধে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালটির পরিবেশ স্বাস্থ্যসম্মত রাখার পাশাপাশি অনিয়ম দূর করার নানামুখি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই উদ্যোগেরই অংশ, হাসপাতালের আন্তঃবিভাগে চিকিৎসাধীন রোগী দেখার জন্য যখন চিকিৎসক যাবেন তখন রোগীর পাশে একজনের বেশি নিকটজন থাকতে পারবে না। তাছাড়া রোগীর পাশে বাড়তি লোকজন সবসময়ই ক্ষতির কারণ। এ জন্যই মূলত বাড়তি লোকের চাপ ঠেকাতে স্বেচ্ছাসেবীদের দরজায় দাঁড়িয়ে দরাজগলায় বলতে হয়, এখন ভেতরে প্রবেশ নিষেধ। সাময়িক এই নিষেধাজ্ঞা যে সুমির সারাটা জীবনে দীর্ঘশ্বাস হয়ে দাঁড়াবে তা অবশ্যই ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত কর্তার আগেই উপলব্ধি করা দরকার ছিলো। কেন না, রোগীর পাশে থাকা একমাত্র ব্যক্তিকে জরুরি প্রয়োজনে বাইরে যেতেই হতে পারে। জরুরিভাবে প্রবেশে যাতে বাধাপ্রাপ্ত না হতে হয় সে লক্ষ্যে ভিজিটর কার্ড বা প্রবেশপত্র থাকা বাঞ্চনীয়। দরজায় কড়াকড়ি করা হলো, অথচ প্রবেশপত্র দেয়া হলো না। এটা অদূরদর্শীতারই প্রকাশ। প্রবেশপত্র থাকলে সুমি নিশ্চয় স্বেচ্ছাসেবীর বাধার মুখে পড়তেন না। শাশুড়ি অকালে চলে গেলেও সুমির নিশ্চয় সাথী হতো না দীর্ঘশ্বাস।
চিকিৎসা সেবা পাওয়া দয়া নয়, দেশের প্রত্যেক নাগরিকেরই অধিকার। সাংবিধানিক এ অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারও বদ্ধ পরিকর। তারপরও অপ্রতুলতাসহ নানা কারণে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর জন্যও বাইরে থেকে ওষুধ পথ্য কিনতে হয়। শুধু কি তাই? হাসপাতালের পরিবেশ কিছুটা ভালো রাখতে অতিরিক্ত লোকবল নিযুক্ত করাসহ বিশেষ উদ্যোগও নিতে হয়েছে। চিকিৎসক সঙ্কট থাকলেও কর্তব্যরতদের আন্তরিকতা আশার আলো জাগিয়েছে। নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সার্বক্ষণিক পুলিশও মোতায়েন রয়েছে। পরিবেশ শুধু দৃষ্টিনন্দনই নয়, সুবাসিত করতে ফুলবাগানও শোভা পাচ্ছে হাসপাতালের আঙিনায়। এতোকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ শুধুমাত্র প্রবেশপত্র প্রণয়ন না করার কারণে ম্লান। ক্ষতিতে ক্ষোভ, নানা শঙ্কা।