সামান্যে ক্ষিপ্ত হওয়া কি মানুষের মানায়?

আবাদী জমির সীমানা নির্ধারণের উঁচু করে রাখা মাটিকেই মূলত আইল বলে। এই আঁইল ঠেলে নিজের জমির পরিমাণ বাড়িয়ে নেয়ার মতো হীনমানসিকতার মানুষের অভাব নেই। মাঝে মাঝেই পত্রিকার পাতায় উঠে আসে আঁইল ঠেলা নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের খবর। সর্বশেষ গতপরশু চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার পল্লি সাহেবপুরে শরিকি জমির আঁইল ঠেলা নিয়ে দু ভাইয়ের বিরোধে এক ভাইয়ের প্রাণ ঝরেছে। ছোটভাই তার বড় ভাইকে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে খুন করে লাপাত্তা। পুলিশ তাকে খুঁজছে। গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে খুনি। ঘাতকের পরিবারটাই শুধু নয়, ভাইয়ের সাজানো সংসারটাও এখন তছনছ মূলত তার অসহিঞ্চুতার কারণে। অথচ সামান্য ত্যাগ উভয়ের জন্যই ছিলো কল্যাণকর।
মানুষ কেন যে মাঝে মাঝে হিং¯্র হয়ে ওঠে? বুদ্ধিমান প্রাণী বলেই কি বনের হিং¯্রকেও হারা মানাতে হবে? যদিও কারো কারো অন্যায়ের পর অন্যায়ের কারণেই প্রতিবাদ করতে গিয়ে কখনো কখনো কারো কারো পেশি শক্তি প্রয়োগের পথে হাঁটতে হয়। কেননা, অন্যায় মেনে নিতে নিতে এক সময় অন্যায়কারী সর্বগ্রাসী হয়ে ওঠে। তখন নিজেকে রক্ষায় প্রতিবাদ ছাড়া উপায় থাকে না। অবশ্য সেই প্রতিবাদ আইনের আশ্রয়ের মাধ্যমেও করা যেতে পারে। অন্যথায় বিপদ দোরগোড়ায় ঘুর ঘুর করতে থাকে। সামান্য বেসামালেই অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে সর্বনাশ। যেমনটি হয়েছে আলমডাঙ্গার সাহেবপুর গ্রামে। যে গ্রামটি কিছুদিন আগেও একটু অন্যভাবে দেখতো এলাকাবাসী, সেই গ্রামের মানুষ পরিশ্রমী হয়ে উঠেছে। সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে সাহেব বানানোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে যে গ্রামের মানুষ, সেই গ্রামের ও গ্রামবাসীর সার্বিক উন্নয়নে সচেতনতার আলো ছড়ানো যে জরুরি, তা ওই খুনের ঘটনার মধ্যদিয়ে আবারও স্পষ্ট হয়ে উঠলো। অপরদিকে একই উপজেলার নগরবোয়ালিয়া গ্রামে রাস্তার জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিবেশীদের মধ্যে বাগবিত-ার একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কিতে এক বৃদ্ধের প্রাণ ঝরেছে। এটাও সেই সামান্য ত্যাগ করতে না পারার চরম খেসারত। অসচেতনতারই বহির্প্রকাশ।
হিংসা হানাহানি অকল্যাণই শুধু বয়ে আনে না, নিজের প্রতিভাকেও ধুলুণ্ঠিত করে। অন্যায় যে করে, অন্যায় যে সহে উভয়ই সমঅপরাধী হলেও প্রতিবাদ মানে নিশ্চয় পেশিশক্তি প্রয়োগ নয়। অবশ্যই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে, প্রতিবাদ হতে হবে ন্যায় দৃষ্টিতে আইনের মাধ্যমে। জমির আঁইল ঠেলা অন্যায়। সেই অন্যায়ের নালিশ নিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়ে ধিক্কার জুটলে হিং¯্র হওয়া অমূলক নয়। সাহেবপুরে বড় ভাইয়ের ওপর ছোট ভাইয়ের হিং¯্রতার আড়ালে কি তেমন কিছু লুকিয়ে আছে? সেটাও যেমন খতিয়ে দেখা দরকার তেমনই সহোদর খুনের উপযুক্ত শাস্তিও নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সহনশীলতা আর ত্যাগের মহিমায় মহৎ না হয়ে সামান্যে ক্ষিপ্ত হওয়া কি মানুষের মানায়?