সামাজিক অবক্ষয় কোনো পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে

খুন ও ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েই চলেছে। নারী অধিকার সংগঠন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বলছে, শুধু গত জুলাই মাসেই দেশে ৯৭ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ১৫ জনকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১১ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। ২৮ নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। বগুড়ার তুফান কাণ্ডের রেশ মিলিয়ে যাওয়ার আগেই রাজশাহীতে গেস্ট হাউসে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক নারী। গাজীপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ আসার পথে চলন্ত ট্রাকে এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ট্রাকচালক ও তার সহকারীর বিরুদ্ধে। নরসিংদীতে তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা হয়েছে। জামালপুরে স্কুলছাত্রী দুই বোনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। গলাচিপায় মা-বাবা ও মেয়েকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। সমাজের কিছু মানুষ যেন দিন দিন অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠছে। ক্ষমতার রাজনীতিও কাউকে কাউকে প্রতাপশালী করে তুলছে। এমনটি চলতে থাকলে শিগগিরই যে সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট হবে, মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় চরমে পৌঁছেছে। কিছু মানুষের মধ্যে নৈতিকতা বলতে কিছু নেই। যেখানে তিন বছরের শিশুও ধর্ষণের শিকার হয়, সেখানে সামাজিক অবক্ষয় কোনো পর্যায়ে গেছে, তা নতুন করে বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। যখনই কোনো অপরাধের ঘটনা ঘটে তখন প্রচলিত আইনের সহযোগিতা নেয়া হয়। অপরাধ যেই করুক, তার কঠোর শাস্তিই কাম্য। কিন্তু প্রচলিত আইনে বিচার করলেই সমাজ থেকে সব অপরাধ দূর হয়ে যাবে, এমন আশা করা যায় না। দেশে মূল্যবোধের অবক্ষয় এক দিনে হয়নি। সামাজিক অসহিষ্ণুতাও অপরাধপ্রবণতার জন্য দায়ী। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার সহজ কোনো পথ খোলা আছে বলে মনে হয় না।

আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন ঢিলে হয়ে গেছে অনেক আগেই। অনুশাসন বলতে কিছু নেই। আগে সামাজিকভাবে প্রতিরোধের ব্যবস্থা ছিলো। কিন্তু মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা ইদানীং দেখা যায় না। ফলে হঠাৎ প্রতাপশালী হয়ে ওঠা অনেকেই আইন অমান্য করার সাহস দেখায়। কাজেই প্রচলিত আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক অনুশাসন ও মূল্যবোধগুলো ফিরিয়ে আনতে হবে। অন্যথায় এ অবক্ষয় রোধ করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।