সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের দু বছর

বহুল আলোচিত চাঞ্চল্যকর সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার দু বছর পার। এ সাংবাদিক দম্পতি খুন হওয়ার পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছিলেন, খুনিদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করা হবে। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টা দূরের কথা, গত দু বছরেও খুনিদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। শুধু তাই নয়, হত্যার মোটিভ সম্পর্কেও কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি। বরং হত্যাকাণ্ড নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে একেক সময় একেক রকম বক্তব্য দেয়া হয়েছে। গ্রেফতারকৃত সন্দেহভাজন আসামিদের ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়েছে।

জানা যায়, পুলিশ-র‌্যাব এ পর্যন্ত দু শতাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। কবর থেকেও তোলা হয়েছিলো সাগর-রুনির মরদেহ। নানা আলামতের নমুনা পাঠানো হয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্রে। এতো কিছুর পরও তদন্তের ফল শূন্য হওয়ায় নিহতদের স্বজন আর গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বাড়ছে। স্বজনদের মনে এমন প্রশ্নও দেখা দিয়েছে যে, খুনিরা কি ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাবে? শুধু স্বজন ও সাংবাদিকরাই নন, গোটা জাতির প্রশ্ন, কতো দিনে এ হত্যাকাণ্ডের রহস্যভেদ হবে?

সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের দু বছর পার হলেও মামলার তদন্তে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই, এটা দুর্ভাগ্যজনক। এ চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ ও ডিবির তদন্তের ব্যর্থতার পর ২০১২ সালের এপ্রিল থেকে উচ্চ আদালতের নির্দেশে মামলাটির তদন্ত করছে র‌্যাব। এর আগে র‌্যাব বলে আসছিলো, সাগর-রুনির বাসার নিরাপত্তাকর্মী হুমায়ুন ওরফে এনামুলকে গ্রেফতার করা সম্ভব হলে হত্যারহস্যের জট খুলবে। কিন্তু গত বছর এনামুল গ্রেফতার হলেও এ হত্যারহস্যের জট আজও খোলেনি।

স্মরণ করা যেতে পারে, ২০১২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরোয়ার ও তার স্ত্রী এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি গভীর রাতে নিজ ফ্ল্যাটে খুন হন। হত্যাকাণ্ডের পর প্রশ্ন উঠেছিলো, সুরক্ষিত ফ্ল্যাটের নিরাপত্তা বেষ্টনি পার হয়ে খুনিরা কিভাবে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করতে পারলো? ধারণা করা হয়েছিলো, খুনিদের অতিপরিচিত অথবা স্বজনদের কেউ ঘটিয়েছে এ হত্যাকাণ্ড। সবাই আশা করেছিলো, সাগর-রুনি যেহেতু সাধারণ কেউ নন, তারা মিডিয়াকর্মী, অন্তত সে কারণে হলেও তাদের হত্যাকাণ্ডের রহস্য দ্রুত উন্মোচিত হবে এবং খুনিরা প্রাপ্য শাস্তি পাবে। কিন্তু গত দু বছরেও হত্যারহস্যের কূলকিনারা না হওয়ায় এ প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেশাগত অদক্ষতাই এর জন্য দায়ী, নাকি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবেই আড়াল করা হচ্ছে প্রকৃত খুনিদের? সাধারণ মানুষ এটা বিশ্বাস করতে চাইছে না, আমাদের পুলিশ কিংবা র‌্যাব এতোটা অদক্ষ যে, একটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের রহস্য তারা দু বছরেও উদঘাটন করতে পারবে না। অনেকেই মনে করছেন, পেশাগত কারণে সাগর-রুনির শত্রু সৃষ্টি হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়, আর তারাই হয়তো হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্ব দিয়েছে এবং তারা সামাজিকভাবে এতোই শক্তিশালী যে, থেকে যাচ্ছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার সাংবাদিক সমাজের একটি বড় দাবি।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মনে রাখতে হবে, যেমন-তেমন তদন্ত দিয়ে দেশবাসী বিশেষত সাংবাদিক সমাজকে সন্তুষ্ট করা যাবে না। তদন্ত হতে হবে যথার্থ অর্থেই সুষ্ঠু। সাগর-রুনি এখন শুধুই দুটি নাম নয়, তাদের হত্যার বিচার পাওয়ার বিষয়টি এখন এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে সাংবাদিক সমাজের কাছে। এ চ্যালেঞ্জ থেকে পিছু হটার কোনো সুযোগ নেই। হত্যাকাণ্ডের দু বছর পূর্তিতে আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা সরকারের প্রতি আরেকবার আবেদন জানাবো, যথেষ্ট হয়েছে। আর বিলম্ব না করে দ্রুত দেশবাসীর সামনে উদঘাটন করা হোক সাগর-রুনির হত্যারহস্য। আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক প্রকৃত খুনিদের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ব্যর্থতা কাটিয়ে অবিলম্বে এ হত্যারহস্য উন্মোচন করবে, এটাই দেখতে চায় মানুষ।