সাকিব আল হাসান : আলোচনা-সমালোচনা ও উদ্বেগ

 

সাকিব আলহাসান একজন ব্যক্তি হলেও তিনি দেশের সম্পদ। ব্যক্তি সাকিব আর ক্রিকেটার সাকিব যে এক নয় তা তিনি মাঝে মাঝেই ভুলে গেছেন। আচরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অধিনায়কত্ব হারানোর আড়ালেও তার আচরণই যে দায়ী তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। সর্বশেষ বিসিবি তার বিরুদ্ধে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা কতোটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে দেশ জুড়েই আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশের ক্রিকেটের পর্ণকুটিরে যার আবির্ভাব সম্রাটের মতো তাকে ৬ মাসের জন্য নিষিদ্ধ করাটা কি দেশের ক্রিকেটের ওপরই কুঠারাঘাত নয়?

সাকিবযে বাংলাদেশের গর্বের ধন তা নিয়ে বিন্দুমাত্র সংশয় থাকার কথা নয়। তাকে আগামী ছয়মাসের জন্য সবধরনের ক্রিকেট হতে নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। শুধু তা-ই নয়, ২০১৫ সালের ডিসেম্বরপর্যন্ত আইপিএল’র মতো কোনো আন্তর্জাতিক আসরেও খেলতে পারবেন না তিনি।সাকিবকেন্দ্রিক যাবতীয় আলোচনা-সমালোচনা ও উদ্বেগের মূলে রয়েছে বিসিবিপ্রদত্ত এ শাস্তি। স্পষ্টভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে জনমত। শাস্তিরযৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিসিবি সভাপতি খোলাখুলিই বলেছেন,দীর্ঘদিনের তিক্ত অভিজ্ঞতাই তাদের এ সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধ্য করেছে। তারা বলেছেন, সাকিব নিয়মনীতির তোয়াক্কা করতেন না। তার আচরণের কারণে যে দলীয়পারফরম্যান্স শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা নয়, অন্য কয়েকজন ক্রিকেটারেরআচরণেও তার নেতিবাচক প্রভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এ যুক্তির সাথে শাস্তির মাত্রা কতোটুকু যুক্তিযুক্ত? এ প্রশ্ন তুলেই অনেকের অভিমত- এর পেছনে পরশ্রীকাতরতা কিংবা একই ধরনেরকোনো কূটরাজনীতি রয়েছে। কেননা, সাকিবের আচরণে যদি কোনো বাড়াবাড়ি বা ঔদ্ধত্যের প্রকাশ পেয়েই থাকে তার জন্য বিসিবিও কি দায় এড়াতে পারে? অনেকেই সদ্য নিয়োগকৃত উপমহাদেশীয়ক্রিকেট কোচের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে,উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার জন্য নিয়ম-শৃঙ্খলারবিকল্প নেই। কেউ এর ঊর্ধ্বে নন।খেলাধুলার ক্ষেত্রে তোবটেই- জাতীয়,সামাজিক ও পারিবারিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই এটাপ্রযোজ্য।

সাকিব আল হাসান খ্যাতির শিখরে পৌঁছেছেন। তার ক্ষেত্রে নিয়ম-শৃঙ্খলার কড়াকড়ি একেবারেই আরোপ করা যাবে না, তা নয়। বরং বাংলাদেশের লাখ লাখ তরুণের রোল মডেলহিসেবে তার এমন কিছুই করা উচিত নয়- যা ভবিষ্যত প্রজন্মকে বিভ্রান্ত বাভুল বার্তা দেয়। সাকিব আল হাসান এ বিষয়ে সর্বক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারেননি। সাকিবঅকপটে তার ভুল স্বীকার করেছেন। একই সাথে নিশ্চয়তাওদিয়েছেন যে ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। এ প্রতিশ্রুতি বিশেষ বিবেচনা যতোটা যুক্তিযুক্ত ছিলো তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি অতোটা যুক্তির হয়নি। ফলে বিসিবিও কঠোর অবস্থান থেকেসরে আসবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।