সর্বক্ষেত্রেই ন্যায্য হিস্যা আদায়ে সোচ্চার হওয়া দরকার

 

পানিরন্যায্য হিস্যার দাবিতে বিএনপি অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি পালন করেছে। জাতীয় স্বার্থের ইস্যুতে রাজনৈতিক দলের এ ধরনের কর্মসূচি অবশ্য নতুননয়। গঙ্গা নদীতে ভারত নির্মিত ফারাক্কা বাঁধ ভেঙে দেয়ার দাবিতে ১৯৭৬ সালেমওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে লংমার্চ কর্মসূচি পালন করা হয়েছিলো। তিস্তার পানিরন্যায্য হিস্যার দাবিতে কদিন আগে সিপিবি ও বাসদ যৌথভাবে লংমার্চ কর্মসূচিপালন করেছে। এ ধরনের কর্মসূচির পেছনে রাজনীতি থাকতে পারে, তবে একে অযৌক্তিকবলা যায় কি?

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর এসব লংমার্চ ভারতের সরকার ওজনগণের কাছে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরের জরুরি প্রয়োজনীয়তার কথাতুলে ধরবে। তাছাড়া আমরা আমাদের প্রাপ্য অধিকার না পেলে আমাদের পক্ষ থেকেপ্রতিবাদ উঠবে, এটাই তো স্বাভাবিক। বিষয়টিকে সেভাবেই দেখতে হবে। তবে এধরনের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হওয়াই সমীচীন। সরকারেরও উচিত এক্ষেত্রে কোনোপ্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করা। লংমার্চের প্রথম দিনে হঠাত করে তিস্তায় বান নামলো কেন? এটা কি তামাশা নাকি আন্দোলনের প্রতি সম্মান তাও ক্ষতিয়ে দেখা দরকার বৈকি।

ভারত তিস্তার গজলডোবা ব্যারাজের সব গেটবন্ধ করে দেয়ায় দেশের তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প এখন অর্থহীন হয়ে পড়েছে। এমুহূর্তে সেখানে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার কিউসেক পানি থাকার কথা থাকলেওআসছে মাত্র ৭০০ কিউসেক পানি। বিকল্প হিসেবে অগভীর নলকূপ বসিয়ে সেচ দেয়ারচেষ্টা চললেও তাতে ব্যয় অনেক বেশি। এ অবস্থায় উত্তরাঞ্চলের চার জেলারকৃষকরা সেচের অভাবে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। পানির জন্য ইতোমধ্যে সড়ক অবরোধ, বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়, ডিসি অফিস ঘেরাও করেছে এলাকার মানুষ। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের হাতে লাঠিপেটাও খেয়েছে কৃষক।বোঝা যাচ্ছে, তিস্তাচুক্তি স্বাক্ষর না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতির উন্নতির আশা করা বৃথা।সেক্ষেত্রে ভারতের চলমান নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আমাদের সামনে আরকোনো পথ নেই। চুক্তিটি সম্পূর্ণভাবে ভারতের জন্যই আটকে আছে। বিষয়টি নিয়েভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের মধ্যে এক ধরনেরটানাপোড়েনও চলছে। বিষয়টি তাদের সমঝোতার ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। এ সমঝোতানির্ভর করছে নির্বাচনের পর কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের সমীকরণ কেমন হবে তারওপর। তিস্তা চুক্তি যতো দ্রুত সম্পাদন হয়, আমাদের জন্য ততই মঙ্গল।

ইতোমধ্যেতিস্তার পানি প্রবাহ নিয়ে নানা উদ্বেগজনক তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। কিছুদিন আগেভারতের প্রভাবশালী সংবাদপত্র এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করাহয়েছে, বাংলাদেশকে এখন যে নামমাত্র পানি দেয়া হয়, তা থেকে আরও ১০ থেকে ২০শতাংশ পানি সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছে ভারত। বিষয়টি উদ্বেগজনক। এভাবে পানিপ্রবাহ হ্রাস পেতে থাকলে অচিরেই বাংলাদেশ অংশে থাকা এ নদীর মৃত্যু ঘটবে।দেশে এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। এর ফলে নীলফামারী, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট ও বগুড়ার অন্তত সাড়ে ৬ লাখ হেক্টর জমি সেচ সুবিধা থেকেবঞ্চিত হবে। সর্বোপরি কয়েক লাখ মৎস্যজীবীসহ প্রায় কোটি মানুষের জীবন ওজীবিকায় ঘোর অনিশ্চয়তা নেমে আসবে। এ পরিস্থিতি এড়াতে হলে অবিলম্বে চুক্তিরমাধ্যমে তিস্তার পানির ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

অভিন্ন নদীরস্বাভাবিক গতি-প্রবাহে ব্যত্যয় ঘটানো, নদীর ওপর বাঁধ তৈরি কিংবা নদীরপ্রবাহকে ভিন্নদিকে প্রবাহিত করা ইত্যাদি একতরফাভাবে হতে পারে না। এটিআন্তর্জাতিক রীতিনীতির পরিপন্থি। আমাদের প্রত্যাশা, নির্বাচনের মাধ্যমে যেদল বা জোটই ক্ষমতায় আসুক, বৃহৎ প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত এ ব্যাপারেসুবিবেচনার পরিচয় দেবে। তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ দ্রুততিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা বুঝে পাবে, এটাই প্রত্যাশা। সর্বক্ষেত্রেই ন্যায্য হিস্যা আদায়ে সোচ্চার হওয়া দরকার।