সর্পরাজ বলে দাবি করে প্রতারণার ফাঁদ এবং …

 

তাবিজ-কবজ তন্ত্র-মন্ত্র দিয়ে শুধু গ্রাম্য সরলসোজা মানুষগুলোর সাথেই প্রতারণা করা যায় না, বড় বড় অফিসের শিক্ষিত মানুষগুলোকেও ঠকানো যায়। ঢাকা সাভারের জিয়ারুল নামের এক ব্যক্তি চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বিপাকে পড়ার পর এরকমই তথ্য দিয়েছে। জিয়ারুল বলেছে, ‘অফিসে চাকরি করা ব্যক্তিদের কেউ কেউ সহজেই প্রতারণার ফাঁদে পড়েন এবং তাদের নিকট থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়া সহজ। সে কারণে গ্রামের সরলসোজা মানুষগুলোর বদলে অফিসে অফিসে ঘুরে নিজেকে সর্পরাজ বলে দাবি করে প্রতারণার ফাঁদ পেতে টাকা হাতিয়ে নেয়ার পথেই হাঁটছিলাম’। অবশেষে আইনি ধাক্কা তাকেই শুধু নয়, তার মতো অন্যদেরও সঠিক পথে ফিরতে সহায়ক হবে বলে আশা করা অবান্তর নয়।

 

সমাজে অবশ্যই সচেতনতার আলো সম্প্রসারিত হচ্ছে। প্রতারকরা হারাচ্ছে তাদের অনুকূল পরিবেশ। মানুষ যতো সচেতন হবে, সমাজ যতো কুসংস্কারমুক্ত হবে, ততোই পিছু হটবে কুসংস্কারের ওপর ভর করে মানুষ ঠকানো মানসিকতা নিয়ে ঘুর ঘুর করা প্রতারকচক্র। স্বাস্থ্যবিজ্ঞান সনাতন চিকিৎসা পদ্ধতিকে শুধু বাতিলই করেনি, তার ক্ষতিকর দিকগুলোও তুলে ধরেছে। এ সম্পর্কে সাধারণ মানুষ এখনও অতোটা সচেতন নয়, যতোটা সচেতন হলে ওইসব ভণ্ড প্রকৃতির প্রতারকদের কথায় প্রতারিত হতে হয় না। শিক্ষিত হলেই যে এ ধরনের প্রতারকদের প্রতারণার শিকার হচ্ছেন না, তা নয়। সকল শিক্ষিতকেই যেমন সচেতন বলা যায় না, তেমনই বিদ্যালয়ে না গিয়েও অনেকে সচেতন। তবে শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়েও সচেতনতার আলোর অভাব যাদের মধ্যে তাদের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। হাতুড়ে হেকিম বা ডাক্তারের চাটুকারি কথায় যারা মজে তাদের তাবিজ-কবজ, বনরুইয়ের মালিশ নেন তাদের পোশাক চকচকে হলেও কি শিক্ষিত বলা চলে? বড় বড় সনদধারী কুসংস্কারাচ্ছন্ন। এদের কারণেই আলোকিত সমাজ গঠনের পথ দুর্গম হয়। কারণ, সরলসোজা মানুষগুলো সমাজের শাদা পোশাক পরা মানুষগুলোর চলাফেরা, আচরণ দেখেই শেখে। সনদধারীরাই যদি প্রতারিত হওয়ার মতো অন্ধকারে হাবুডুবু খান তাহলে অন্যদের ক্ষেত্রে কেমন ঘটে?

 

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দফতরে ধান্দার ফাঁদ পেতে ধরা পড়েছে। আইনের দৃষ্টিতে বিচার হয়েছে। ভ্রাম্যমান আদালত তাকে ৭ দিনের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন। এতে নিশ্চয় তার শিক্ষা হবে। সুধরে নেবে নিজেকে। তার শাস্তি দেখে অন্যরাও প্রতারণার পথ পরিহার করে বৈধ পথে উপার্জনের চেষ্টা করবে। দীর্ঘদিন ধরে যে জিয়ারুল অফিসে অফিসে ঘুরে ঠকিয়েছে শাদা জামা পরা অনেকের, সেই জিয়ারুল এতোদিন না বুঝলেও এবার নিশ্চয় বুঝেছে সকলে এক নয়। জিয়ারুলদের মতো অসংখ্য ভণ্ড সর্পরাজ রয়েছে। যারা প্রতিনিয়তই মানুষ ঠকাচ্ছে। এদের সুধরে সঠিক পথে নিতে যেমন দরকার আইনের যথাযথ প্রয়োগ, তেমনই দরকার সমাজের সাধারণ মানুষগুলোকে সচেতন করে তোলা। এজন্য অবশ্যই সচেতনমহলকেই দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন।