সরকারি ওষুধ আত্মসাতকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দরকার

 

দুর্নীতি সংক্রামক সামাজিক রোগ। যে জাতি এ রোগে আক্রান্ত, সেই জাতির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছুনোর আশা অনেকটাই অবান্তর। আমরাও আক্রান্ত, তবে কতোটা? তা নিয়ে এখনও কিছুটা প্রশ্ন আছে বলেই আমাদেরকে দুর্নীতিগ্রস্ত জাতি নামক তকমাটা পেতে বাকি। যদিও আন্তর্জাতিকভাবে দুর্নীতিগ্রস্ততার সূচকে খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। সর্বশেষ জরিপে ১৩তম অবস্থানে বাংলাদেশ। তবে দেশের দুর্নীতি দমন কমিশনকে দুর্নীতি দমনে পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতায়ন করার পাশাপাশি তাদেরও স্বচ্ছ্ব জবাবদিহিতা  নিশ্চিত করতে পারলে দুর্নীতি নামক কলঙ্ক থেকে রেহায় পাবে জাতি। এ প্রত্যাশা অমূলক নয়।

দুর্নীতি রাস্তার পাশে জমে থাকা কোনো স্তূপ নয়। সংক্রামক। মানুষের মগজে বাসাবেধে গোটা সমাজই গিলে খাওয়া শুরু করে। সে কারণেই সামাজিক এ সমস্যাকে সংক্রামক বলা হয়। যে সমাজে দুর্নীতি যতো বেশি, সেই সমাজের অগ্রযাত্রা তথা উন্নয়নের পথ ততোটাই অমসৃণ। যে বিভাগ যতোটা দুর্নীতগ্রস্ত সে বিভাগে সরকারের সফলতাও ততোটাই লজ্জার। অবস্থা দৃষ্টে আমজনতার বাড়ে দীর্ঘশ্বাস। এর মধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগ অন্যতম। দেশের প্রত্যেকের স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এ অধিকার সংবিধানিক। যখন যারা সরকার পরিচালনার দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হন, তখন তাদেরই মুখ দিয়ে সকলের মৌলিক চাহিদাগুলো যথাযথভাবে পূরণের সর্বাত্মক চেষ্টার কথা বলা হয়। যখন সেই চেষ্টার ছিটেফোটাও ভোক্তাদের মাঝে পৌঁছায় না তখন সরকারের শীর্ষ দায়িত্বশীলদের ওই বক্তব্যের ফুলঝুরি বানোয়াট বলেই প্রতীয়মান হয়। সরকার চেষ্টা করেও আমজনতার আস্থালাভে সাফল্য হয় না। কারণ? দুর্নীতি। যেমন সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত ওষুধ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের মাঝে না পৌছে বিক্রি করে অর্থ পকেটস্থ করা। গতপরশু চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের …… স্টোরকিপারকে দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি দল আটক করে পুলিশে দেয়। আদালতে সোপর্দ করার পর তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। এ বিষয়ে সচিত্র প্রতিবেদন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হলে আমজনতার বুঝতে বাকি থাকে না, কেনো হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে ওষুধ পথ্য ঠিক মতো পাওয়া যায় না। বিষয়টি নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরেই যে ওষুধ নিয়ে দুর্নীতি হয় তা অস্বীকার করা যায় না। ওষুধ আত্মসাত করে যারা ধরা পড়েছে তাদের বিষয়ে ন্যায় ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার হলে উপকৃত হবে সমাজ।

দুর্নীতি বহুমাত্রিক। দমনের উপায়? আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারলে সামাজিক এ সমস্যা দূর করতে সামাজিক আন্দোলনও ত্বরান্বিত হতে বাধ্য। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন, তা হলে আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপ সূচকে আমাদের অবস্থান অতোটা লজ্জ্বাজনক কেনো? দুর্নীতি করে পার পাওয়া যায় না। সরকারি-আধা সরকারি, স্বায়ত্ব শাসিত প্রতিষ্ঠানসহ সর্বক্ষেত্রেই দুর্নীতি বিরোধী অভিযান দরকার। সত্যিকার অর্থেই দুর্নীতি দমনে বাস্তবমুখি পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। পক্ষপাত বা কেউ কেউ বিশেষ অভিযানের শিকার হলে আস্থাহীনতা বাড়ে। সংক্রামকও সংক্রমিত হওয়ার পরিবেশ পেয়ে বসে।