সম্মিলিতভাবে মোকাবেলা করতে হবে

 

যতো দিন যাচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতও ততোই স্পষ্ট হয়ে উঠছে নানা ক্ষেত্রে। অথচ কয়েক দশক আগেও কতোই না বিতর্ক হয়েছে এটা নিয়ে। চলছে অন্যের ঘাড়ে দায় চাপাইনোর অথবা নিজেদের দায় এড়াইনোর চেষ্টা। ফলে সর্বসম্মত একটি চুক্তি বা ঐকমত্যে উপনীত হতেই কেটে গেছে দশকের পর দশক। এমন একটি ধারণাও গড়ে উঠেছিলো যে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কেবল উন্নয়নশীল দুনিয়ার দেশগুলোই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে এর সকল দায়-দায়িত্ব ঢালাওভাবে উন্নত দেশগুলোর ওপর চাপিয়ে দেয়ার একটি প্রবণতাও প্রকট হয়ে উঠেছিলো। ফলে এমন একটি প্রত্যাশাও তৈরি হয়েছিলো যে, ক্ষতিপূরণ হিসেবে উন্নত দুনিয়ার দেশগুলো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলিকে অর্থসহায়তা প্রদান করবে জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান থেকে শুরু করে বিশ্বের কোনো দেশই রক্ষা পাচ্ছে না জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট বিপর্যয় থেকে। শুধু তাই নয়, যতোটা আশঙ্কা করা হয়েছিলো জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের ব্যাপ্তি ও ভয়াবহতা ক্রমশ তাকে ছাপিয়া উঠছে।

সময় এসেছে প্রকৃত সত্যের মুখোমুখি হওয়ার। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে বাংলাদেশের পটুয়াখালী পর্যন্ত একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব যেই বার্তাটি বহন করছে তা হলো- জলবায়ু পরিবর্তন একটি বিশ্বজনীন সমস্যা। এর প্রভাবে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকল দেশই যেমন কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি জলবায়ুর এই বৈরিতার পেছনে কারও অবদান কম নয়। ভৌগোলিক অবস্থান, জাতীয়তা এবং ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক পরিচয় যা-ই হোক না কেন— এই সত্য অস্বীকার করা যাবে না যে, প্রায় সাতশত কোটি মানুষের একটিই ধরিত্রী। আর সেই ধরিত্রীই আজ বিপন্ন। কেন বিপন্ন— তার উত্তরও কারো অজানা নয়। এতে কে কতোটা অবদান রেখেছে সেই বিতর্ককে দীর্ঘায়িত করে আরও কিছু সময়ের অপচয় করা যাবে, কিন্তু তাতে ধরিত্রীর যে খুব একটা কল্যাণ সাধিত হবে না— বিগত দশকগুলোতে তা প্রমাণিত হয়ে গেছে। বিপন্ন ধরিত্রীকে বাঁচানোর পথ একটাই। পূর্ণ সদিচ্ছা সহকারে সবাইকে এই লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং যার যতোটুকু সামর্থ্য আছে তা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে সংকট মোকাবেলায়।

আশার কথা হলো- ইতোমধ্যে সেই ঐকমত্যের পথে আমরা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছি। সর্বাপেক্ষা তাত্পর্যপূর্ণ দিকটি হলো- নীতিনির্ধারক মহল থেকে শুরু করে ভুক্তভোগী জনগণ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী পরিবেশ বিষয়ে যে-সচেতনতার বোধ তৈরি হয়েছে তা এককথায় অভূতপূর্ব। অতএব, হতাশ হওয়ার কিছু নেই। তবে সকলেই স্বীকার করেছেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মারাত্মকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকার প্রথম সারিতে থাকা বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দুনিয়ার দেশগুলোর পক্ষে একা এই ঝুঁকি মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, সকলের আন্তরিক ও সম্মিলিত সহায়তা এইক্ষেত্রে তাহাদের ভরসা জোগাইবে।