সম্প্রীতি রাখতে

 

যে খুদিয়াখালী সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গ্রাম। চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার জেহালা ইউনিয়নের এ গ্রামের প্রায় ৮শ ভোটারের মধ্যে দু শতাধিক ভোটার সোনাতন ধর্মালম্বী। পরিসংখ্যানের এই পৃথকীকরণটুকুও যে গ্রামবাসীর মধ্যে উপলব্ধি হয় না, সেই গ্রামের দরিদ্র খেটে খাওয়া সিদ্বেশ্বরী পরিবারের ওপর হুমকি কেন? তাও আবার ইসলামের নামে। যদিও চিরকুটের ভাষা ও ধরণ দেখে স্থানীয়দের অনেকেরই ধারণা, এলাকারই কোনো মতলববাজ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে পুলিশেরও অভিন্ন অভিমত। তারপরও বিষয়টিকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।

ইসলাম অর্থাৎ শান্তি। শান্তির ধর্মের নামে অশান্তি ছড়ানো অবশ্যই গুরুতর অপরাধ। এ অপরাধের সাথে জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তি হওয়া বিধেয়। অন্য ধর্মালম্বীকে ভয় দেখিয়ে নয়, সধর্মে অন্যকে আকৃষ্ট করতে হলে ধর্মের ভালো দিকগুলো তুলে ধরাটাই উত্তম পথ। এ পথ ত্যাগ করে কেউ আত্মঘাতী হলে তার বেহেস্ত যে মিলবে না তা সম্প্রতি দেশের বহু আলেম উলামায়ে ইকরামগণ বিবৃতিতে উল্লেখ করে ভ্রান্তপথ ত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন। অবশ্যই ধর্মীয় অনুশাসন একজন মানুষকে সুপথে রাখতে সহায়ক। কোন ধর্মই কি মানবতার ঊর্ধ্বে? নাকি বিরুদ্ধে? ঊর্ধ্বে বা বিরুদ্ধে নয় যখন তখন কে কিসের মাংস খেলো বা ফ্রিজে রাখলো তা নিয়ে সংখ্যা গরিষ্ঠদের উগ্র হয়ে সংখ্যালঘুর ওপর হামলে পড়া গুরুতর অন্যায়। একইভাবে কোনো পুরোহিত বা মুক্তমনের কাউকে মেরে তথা অশান্তি ছড়িয়ে কি শান্তির ধর্ম প্রতিষ্ঠা করা যায়? বরঞ্চ উল্টোটাই হয়, হচ্ছেও। সে কারণেই আড়ালে আন্তর্জাতিক চক্রান্ত রয়েছে কি-না তা ঘুরে ফিরেই উঠে আসে আলোচনায়। আর স্থানীয়ভাবে আতঙ্কগ্রস্থ করার আড়ালে? পড়শীর ষড়যন্ত্র থাকা অমূলক নয়। কখনো কখনো কাছেরই কেউ অল্প টাকায় ভিটে-জমি হাতানোর জন্য যে ওই ধরনের আতঙ্ক ছড়ায় না তাও নয়। ফলে যেকোনো হুমকিতে শঙ্কিত হওয়ার আগে প্রকৃত বিষয়টি উপলব্ধি করা যেমন দরকার মেনই দরকার পুলিশের বাস্তবমুখী পদক্ষেপ। প্রশাসনের তরফে সর্বাত্মক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে আতঙ্ক কাটিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হবে, হুমকিদাতা যে বা যারাই হোক  তাকে বা তাদের ধরে উপযুক্ত শাস্তি দ্রুত নিশ্চিত করা দরকার। গ্রামবাসীকেও এ বিষয়ে দায়িত্বশীল হওয়া দরকার। কেননা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি একটি গ্রামের অহঙ্কার, সেই অহঙ্কারে কলঙ্ক নিশ্চয় গ্রামবাসী বরদাস্ত করবে না।

দেশে স্লিপিং স্কোয়াড তথা পরিকল্পিত হঠাৎ হত্যাকারী বা গুপ্ত ঘাতকচক্র রয়েছে। বিষয়টি বেশ কিছুদিন ধরেই উপলব্ধি করছে দেশবাসী। ওই চক্র চুয়াডাঙ্গাতেও যে নেই তা বলবেন কীভাব? সূত্রমতে, ওই বিষয়ে চুয়াডাঙ্গাও গোয়েন্দা নজরদারি আওতাভুক্ত। ঘটনার পরে নয়, ঘটনার আগেই গোয়েন্দাদের দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। অপরাধীকে ধরে আইনে সোপর্দ করার মতো দক্ষ গোপন সংবাদদাতা নিযুক্ত করার বিষয়টির দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। তাছাড়া ধর্মীয় প্রকৃত জ্ঞানের আলোয় বিপথগামিতা থেকে ফেরানোর মতো কর্মসূচি দরকার। সম্প্রীতি রাখতে আইনের শাসন নিশ্চিত করাও জরুরি।