সমাজ যেন এখন এক আচমকা বাঁকে

দুর্যোগ, দুর্বৃত্তহানার পূর্বাভাসে বাড়তি সতর্কতায় যেমন ক্ষতির পরিমাণ কমায়, তেমনই আতঙ্কও ছড়ায়। এই আতঙ্ক শুধু দুর্বলচিত্তের মানুষকে রোগাক্রন্তই করে না, অনেক সময় ঘাতকেও রূপ নেয়। চুয়াডাঙ্গায় সম্প্রতি দুর্বৃত্তায়নে দিগি¦দিক আতঙ্ক ছড়িয়েছে। যার কুপ্রভাবে দুর্বলচিত্তের নারী-পুরুষ শিশু-কিশোর বৃদ্ধ-বনিতাদের অনেকে মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। এদের কারণে শুধু গুজবই রটছে না, আতঙ্কও চরমে রূপ নিয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশেরই শুধু নয় দায়িত্বশীল সংবাদপত্রসহ কর্তব্যপরায়ণ সচেতনদের নাভিশ্বাস উঠছে। সঙ্গত প্রশ্ন- পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে? সত্যিই তো, সমাজ যেন এখন আচমকা বাঁকে।
যখন কোনো সমাজে সাপের উপদ্রব বৃদ্ধি পায় তখন দুর্বলচিত্তের অনেকেই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে দিনে রাতে জেগে ঘুমিয়ে সাপে কেটেছে বলে চিৎকার শুরু কনে। জুড়ে দেন কান্নাকাটি। তীব্র যন্ত্রণায় কাতরও হতে দেখা যায় তাকে। অথচ সাপে কাটার দাগ পাওয়া যায় না। হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকের বুঝতে বাকি থাকে না, তিনি চিকিৎসার নামে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ওষুধ প্রয়োগ করে রোগীকে দ্রুতই সুস্থ করেন। আর ওঝাকে ডাকলে? তিনি একটু কাটাছেড়া করে কালোরক্ত বের করার নাটক দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে বাড়ি ফেরেন। ঠিক একইভাবে যখন শিশু আতঙ্ক বা নারীদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে বলে গুজব ছড়ায় তখন দুর্বলচিত্তের বা পুষ্টিহীনতায় ভোগা কিছু শিশু হুট করে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে দৌড় শুরু করে। ধরে নিয়ে গেলো বলে চিৎকারও করে। অথচ তেমন কাউকে পাওয়া যায় না। শিশু ভয়ে নীল হয়ে ওঠে। কোনো কোনো শিশু-সন্তানের মা-বাবা, দাদির মধ্যেও এরকম আতঙ্কগ্রস্ততার কারণে দুশ্চিন্তার মাঝে ছায়া দেখেও বোরকাপরা মানুষ দাঁড়িয়ে নাকি? বলে প্রশ্ন তুলতেই পারে। আবার সন্তান কোলে নিয়ে দুধ দেয়ার সময় দুশ্চিন্তার কারণেই সন্তানকে টেনে ধরে নিয়ে যাচ্ছে বলে দিব্যি ভুল হতে পারে। চিৎকারে বাড়ির লোকজন ছুটে এলে বলে ওইতো দৌড়ে পাালিয়ে গেলো। তার কথায় ছোটাছুটি করে কোনো লাভই হয় না। চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন এলাকায় অপহরণের গুজব, মানসিক প্রতিবন্ধীকে মারধর, বোরকাপরা যুবককে ধরে পিটুনির ঘটনাপ্রবাহ কি ওই আতঙ্কেরই কুপ্রভাব? তা না হলে হাতেনাতে ধরার কোনো নজির মিলছে না কেন? যদিও সর্বক্ষেত্রে গণহিস্ট্রোরিয়ায় দায়ি নয়, কোথাও কোথাও কেউ কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেও ঘটাচ্ছে ঘটনা, ছড়াচ্ছে আতঙ্ক। শান্তিকামী সাধারণ মানুষ হচ্ছে বিভ্রান্ত। যদিও দুর্যোগ, দুর্বৃত্তায়নে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে নয়, পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মতো প্রস্তুতি গ্রহণেই কল্যাণ আনে।
গুজব সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ জেলার পত্র-পত্রিকার সম্পাদকম-লীকে আহ্বান জানিয়েছে। আহ্বানের এ খবর গতকাল পত্রিকায় যেমন গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা হয়েছে, তেমনই কিছু এলাকায় গুজব সংশ্লিষ্ট কয়েকটি বর্ণনাযুক্ত খবরও প্রকাশিত হয়েছে। নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, হুট করে বেড়ে যাওয়া অপরাধমূলক ঘটনার পর পুলিশি তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রামে গ্রামে পুরুষরা পালাক্রমে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে। ফলে কমেছে ডাকাতি ছিনতাইসহ অপরাধীদের অপতৎপরতা। অথচ আতঙ্কের কারণে হিস্টোরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ফলে গুজবে হাবুডুবু খেয়ে ডুবতে বসেছে সমাজ। সমাজপতিরা দর্শক।