সব ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে

মানুষ ও সমাজের স্বার্থেই আইনিব্যবস্থা। তবে কখনো কখনো বিচারপ্রক্রিয়ায় ভুল হয়ে যায়। ফলে অপরাধীর লঘুপাপে গুরুদণ্ড হয়, বিচারের বাণী তখন নিভৃতে কাঁদে। ভোলার আব্দুল জলিল নামের এক শিশুকে ভুল আইনের দণ্ড কাঁধে নিয়ে ১৪ বছর ধরে জেলহাজতে কাটাতে হচ্ছে। জেলা দায়রা জজ আদালত শিশু বিবেচনায় জলিলের জন্য জুবেনাইল কোর্ট গঠন করলেও শিশু আইনের বিধান প্রতিপালিত হয়নি। বিচার হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে। বিচারের বদলে লাভ হয় অবিচার। বিষয়টি ধরা পড়ায় উচ্চ আদালত ১৪ বছর অপচয়ের ক্ষতিপূরণ হিসেবে রাষ্ট্রপক্ষকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দানের আদেশ দিয়েছেন।

এ ধরনের ভুলের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র দায় স্বীকার করলেও ৫০ লাখ টাকা জরিমানাকে অতিরিক্ত বলছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি বলেছেন, জরিমানা রাষ্ট্র নয়, ভুল অভিযোগকারীর হওয়া উচিত। অর্থমানের হিসেবে অর্ধকোটি টাকা অবশ্যই বড়। কিন্তু এই টাকা জলিল যদি পানও ফেলে আসা ১৪ বছর তিনি কি ফেরত পাবেন?

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম স্বীকার করেছেন, অর্থের অভাবে মামলা তদবির করতে না পারায় অনেক নিরপরাধ ব্যক্তি জেল খাটছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জেল হিসাব করলে এসব ঘটনার প্রতিকার সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি। তাঁর প্রস্তাব হচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও ডেপুটি কমিশনারদের নিয়ে মাঝেমধ্যে জেল হিসাব গণনা ও অনেক ক্ষেত্রে আসামিদের সাথে কথা বলতে পারে। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তার এই ভাষ্য থেকেও স্পষ্ট, কারো কারো বিচারে ভুল হচ্ছে। হাইকোর্টের রায় গত ডিসেম্বরে দেয়া হলেও আবদুল জলিল মুক্তি পাননি; এবার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর হইচই পড়েছে। রায় বাস্তবায়নে এ জাতীয় কালক্ষেপণও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। ভুল আইনে বিচার হওয়ার বিষয়টি জানার পরও রাষ্ট্র জলিলকে তাত্ক্ষণিক মুক্তজীবন দিতে পারেনি, আদায় হয়নি ক্ষতিপূরণ। এর মধ্য দিয়েও আমাদের বিচারব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ পায়। অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, সমাজ ও রাষ্ট্রের অগ্রগতি নিশ্চিত করা, মানুষের মৌলিক অধিকারের সুরক্ষা এসবের সাথে ন্যায়বিচারের সম্পর্কটি নিবিড়। বিচারব্যবস্থার সব ধরনের দুর্বলতা কাটিয়ে সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।