সবার অংশগ্রহণে সম্পন্ন হোক ডিসিসি নির্বাচন

এক যুগেরও বেশি সময় আগে অর্থাৎ ২০০২ সালের এপ্রিল মাসে ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। সে অনুযায়ী ২০০৭ সালের মে মাসে নির্বাচিত পরিষদের মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু নানা জটিলতায় আবার নির্বাচন করা যায়নি। এরপর ২০১১ সালে সিটি করপোরেশনকে উত্তর ও দক্ষিণ- এ দু ভাগে বিভক্ত করা হয়। ২০১২ সালে নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়া হলেও আইনি জটিলতার কারণে আদালতের আদেশে তা বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে প্রশাসক নিয়োগ করে দু সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এটি যেমন গণতান্ত্রিক রীতি-পদ্ধতির বিরোধী, তেমনি জনগণ কাঙ্ক্ষিত সেবাপ্রাপ্তি থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভাঙা রাস্তাঘাট, নালা-নর্দমা বন্ধ থাকায় এবং পানি নিষ্কাশন না হতে পারায় চরম জনদুর্ভোগ দেখা যায়। আবার বিভিন্ন সেবা পেতে গিয়ে নাগরিকদেরও নানা রকম ভোগান্তির মুখোমুখি হতে হয়। ইতোমধ্যে তিনটি ওয়ার্ডের সীমানা নিয়ে যে জটিলতা ছিলো তার সমাধান হয়েছে। সে কারণে গত সোমবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) চিঠি দিয়ে দু সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুরোধ জানিয়েছে। এবার আশা করা যায়, শিগগিরই দু সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, হরতাল-অবরোধের নামে চলমান সহিংসতার মধ্যে এ নির্বাচন কতটুকু প্রাণবন্ত ও স্বতঃস্ফূর্ত হবে, তা বলা মুশকিল।

ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী এবং সবচেয়ে বড় ও জনবহুল মহানগরী। এ মহানগরীর উন্নয়ন, পূর্ত পরিকল্পনা, অবকাঠামো, নান্দনিক সৌন্দর্য, পরিবেশ, জীবনযাত্রার মানসহ নানা চিত্রই বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে বহুলাংশে তুলে ধরে। এখানে দীর্ঘ সময় ধরে অনির্বাচিত প্রশাসন টিকে থাকা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সম্পর্কেও প্রশ্ন সৃষ্টি করে। পাশাপাশি জনগণের কাছে জবাবদিহি থাকায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে নানা কাজে মানুষ যতো সহজে যেতে পারে, যেভাবে নাগরিক সেবাগুলো পেতে পারে, নিয়োগপ্রাপ্ত প্রশাসনের কাছ থেকে তা পাওয়া সম্ভব নয়। আমরা আশা করি, নির্বাচন কমিশন আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেয়ার পরপরই সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে নানা মহলে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। সম্ভাব্য প্রার্থী নিয়েও জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে গেছে। তবু এ নির্বাচন সম্পর্কে বর্তমানে আন্দোলনরত বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অবস্থান কি হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। যদিও এটি কোনো দলীয় নির্বাচন নয়, তা সত্ত্বেও এখানে রাজনৈতিকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার একটি ঐতিহ্য দীর্ঘদিন থেকেই চলে আসছে। ফলে প্রধান দুটি রাজনৈতিক পক্ষের একটি অনুপস্থিত থাকলে নির্বাচন অনেকটাই নিষ্প্রভ হয়ে পড়বে।

তাই আমরা আশা করি, দু সিটি করপোরেশনের নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপি ইতিবাচক মনোভাবই প্রদর্শন করবে এবং তাদের সমর্থনপুষ্ট প্রার্থীরাও এ নির্বাচনে অংশ নেবেন, যেমনটি দেখা গেছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কিংবা তারও আগে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। আমরা চাই, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ- এই দু সিটি করপোরেশনের নির্বাচন দ্রুত অনুষ্ঠিত হোক এবং সবার অংশগ্রহণে সেটি সত্যিকার অর্থেই একটি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হোক।