সন্দেহের বশে ধরে নির্যাতন কোন সাহসে?

না হোক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। সুস্থ সবল বুদ্ধিসম্পন্ন হলেও কি কোনো মানুষকে ধরে বেঁধে মারা যায়? এটা কি কোন স্নাতক শ্রেণির ছাত্রের কাজ হওযা উচিত? কেবল সন্দেহের বশে একজনকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে গাছে বেঁধে নির্যাতনই শুধু নয়, মৃদুবুদ্ধি প্রতিবন্ধী হতদরিদ্র দিনমজুরের বাড়ি তল্লাশির নামে তছনছ করা হয়েছে। মারধর করা হয়েছে তার স্ত্রীকেও। এটা কোনো সভ্য সমাজের চিত্র? মহাবিদ্যালয়ে পড়ুয়ার না হয় প্রকৃত শিক্ষায় ঘাটতি, অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার বাবাও কি এই বর্বরতায় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেননি? নাকি সন্তানের ঐদ্ধত্যের কাছে তিনিও অসহায়?
চুয়াডাঙ্গা শেখরাতলাপাড়ার বাড়িতে দিবালোকে তালা ভেঙে চুরি হলো। এ চুরির খবর পুলিশে দেয়া হলো না। চুরির আগের দিন ওই বাড়িতে যে হতদরিদ্র সরলসোজা মধ্যবয়সী ব্যক্তি কাঠ চিরে চলা করার কাজ করেন, সেই ব্যক্তিকে ঘটনার সপ্তাহখানেকের মাথায় রাস্তা থেকে তুলে নেয়া হলো। নির্জন স্থানে গাছে বেঁধে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হলো। মারের চোটে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে নির্যাতকদের সব কথাই ঠিক বলে স্বীকৃতি দিতে শুরু করলেন তিনি। এরপর? নির্যাতন করতে করতে তাকে নেয়া হলো যে বাড়িতে চুরি হয়েছে সেই বাড়ি। বাড়ি বন্দি রেখে হতদরিদ্র দিনমজুরের দৌলাতদিয়াড় দক্ষিণপাড়াস্থ বাড়িতে তল্লাশির নামে তছনছ করতে শুরু করলো। দরিদ্রের স্ত্রীকেও মারতে মারতে নেয়া হলো তার স্বামীর কাছে। দৃশ্যবালি ভাবলেই তো গা শিউরে ওঠে? তবে খবর পাওয়ার সাথে সাথে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের তড়িত পদক্ষেপকে প্রশংসা করতেই হয়। নির্যাতিত দিনমজুর কাঁঠুরিয়া ও তার স্ত্রীকে উদ্ধার করার পাশাপাশি নির্যাতক যুবক ও তার মা-বাবাকে আটক করে থানায় নেয়। পুলিশের তরফে সঙ্গতঃ প্রশ্ন- নগদ ত্রিশ হাজার টাকা, এক জোড়া হাতের বালা ও সোনার দুল চুরি হলো অথচ পুলিশে জানানো হলো না কেন? ধরেই নেয়া হলো পুলিশে জানিয়ে কোনো লাভ হয় না বলেই না হয় বলা হলো না, তাই বলে একজন সরলসোজা খেটে খাওয়া মানুষকে ধরে নির্যাতন করা হলো কিসের বলে? যতোবড় অন্যায়ই করুক, হাতেনাতে ধরার পরও কি তাকে নির্যাতন করার অধিকার দেশের প্রচলিত আইন দিয়েছে? তাহলে সন্দেহের বশে ধরে নির্যাতন কোন সাহসে? এ অন্যায়ের আড়ালে শুধু অন্ধত্বই নয়, যাচ্ছে তাই করার অশুভ মদদও স্পষ্ট।
লেখাপড়া কি শুধু চাকরির জন্য সনদ নেয়া? নিশ্চয় না। শিক্ষা মানুষের চোখ খুলে দেয়, জাগ্রত করে বিবেক। যে শিক্ষায় চোখ খোলে না, বিবেক জাগাতে পারে না, সেই শিক্ষার কি কোনো দরকার আছে? চোখ থেকেও খুলতে না পারা ওই অন্ধকে কে-ই বা চাকরি দেবে? অবশ্য উৎকোচ এখন অনেক কিছুই করে দেয়। রাজনীতিও অনেক ক্ষেত্রে উগ্রতায় উৎসাহিত করে। একজন কলেজপড়ুয়া যে অপরাধ করেছে তা খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। ওর সহযোগীদেরও আইনের আওতায় নিয়ে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা দরকার। অন্যথায় বাড়বে অন্যায়ের অভিন্ন প্রবণতা।