সন্তানের মৃত্যু : শিশু গৃহপরিচারিকা নির্যাতনের অভিযোগ

 

তিন মাস আগে তিন বছরের শিশু পুত্রসন্তান তানজিনুর রহমান চোখের সামনে মারা গেলো। মাথার ওপর টেলিভিশন পড়ে শিশুসন্তানের মৃত্যু হয়। এরপর ওই বাড়ি থেকে শিশু গৃহপরিচারিকাকে উদ্ধার করার পাশাপাশি অভিযোগ উঠলো, নির্যাতনের। ঘটনাটি সাতক্ষীরার হলেও চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহের রয়েছে যোগসূত্র। যে শিশু গৃহপরিচারিকাকে উদ্ধার করা হয়েছে তার বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে, আর যার বাসায় শিশু গৃহপরিচারিকাকে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে তিনি চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার বাদেমাজু গ্রামের সন্তান। তিনি বিচার বিভাগীয় একজন ম্যাজিস্ট্রেট। তাকে নিয়ে যখন জেলাবাসী গর্বিত, তখন তাঁর বিরুদ্ধে এহেন অভিযোগ শুধু অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়, মনোকষ্টেরও কারণ।

কোনো সুস্থ বিবেকের মানুষ আর যাই হোক শিশুদের নির্যাতন করতে পারে না। যদিও ঘরে বাইরে বহু শিশু নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। শিশু নির্যাতনকারীদের অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। তার আগে দরকার সুষ্ঠু তদন্ত। সাতক্ষীরার বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট নূরুল ইসলামের তিন বছর বয়সী শিশুসন্তান গত ২৪ মে রাত ৮টার দিকে দুর্ঘটনার শিকার হয়। মারা যায়। শিশুসন্তানের মৃত্যুতে কোনো পিতা-মাতাই কি সুস্থ স্বাভাবিক থাকতে পারে? সন্তান হারানো শোক মুছতে না মুছতে শিশু গৃহপরিচারিকাকে নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে বিচারিক ক্ষমতা হারানোসহ তদন্তের মুখোমুখি হওয়া মানে কঠিন সময় পার করা। বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের সাতক্ষীরাস্থ বাসা থেকে যে শিশু গৃহপরিচারিকাকে উদ্ধার করা হয়েছে তার ছবি দেশের অধিকাংশ পত্রপত্রিকা গুরুত্বসহকারেই প্রকাশ করেছে। অনেকটা হাড্ডিসার। আগুনে গরম কিছু দিয়ে ছ্যাকারও দাগ রয়েছে বলে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। অভিযোগ অবশ্যই গুরুতর।

শিশু গৃহপরিচারিকার জবানবন্দি ইতোমধ্যে লিপিবদ্ধ করাসহ প্রকৃত ঘটনা উন্মোচনে গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। মামলা রুজু করে গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেছে কিছু মানুষ। যে দম্পতি মাত্র তিন মাস আগে শিশুসন্তানের অস্বাভাবিক মৃত্যু দেখেছে, সেই দম্পতির সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয়। বিষয়টির প্রতি যেমন বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার দাবি রাখে, তেমনই বিচার বিভাগীয় একজন কর্মকর্তার বাসা থেকে রুগ্ন হাড্ডিসার গৃহপরিচারিকা উদ্ধার ও নির্যাতনের অভিযোগকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উন্মোচন হোক, অভিযোগের সত্যতা মিললে প্রকৃত দোষীর উপযুক্ত শাস্তি হোক।