সঞ্চয় করে সুফল না পেলে মানুষসঞ্চয়বিমুখ হবে

 

বিভিন্ন সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে সরকারিকর, সার্ভিস চার্জ ইত্যাদি বাদ দিয়ে যে মুনাফা পাওয়া যায়, তার পুরোটাই চলেযাচ্ছে মূল্যস্ফীতির পেটে। বর্তমানে দেশে গড় মূল্যস্ফীতির হারহচ্ছে সাড়ে ৭ শতাংশ। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, সঞ্চয়ের মুনাফা ঘরে তোলারসুযোগ দেয়ার সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হলো মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করা।মূল্যস্ফীতি যদি সঞ্চয়ের মুনাফা খেয়ে ফেলে এবং এ প্রবণতা দীর্ঘদিন ধরেচলতে থাকলে মানুষ আর সঞ্চয়ে উৎসাহী থাকে না।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)স্বল্প আয়ের দেশগুলো (এলআইসি) সম্পর্কে একটি পূর্বাভাস প্রদান করেছিলো, যেখানে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি এবং রফতানি আয় ও রেমিটেন্স প্রবৃদ্ধিহ্রাস পাওয়ার কথা বলা হয়েছিলো। আইএমএফের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী বিশ্ববাজারেনিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ২০১১ সালে বৃদ্ধি পায় ২৫ শতাংশ, যা পরের বছরবৃদ্ধি পেয়ে ৩১ শতাংশে পৌঁছে। মূল্যস্ফীতির নেপথ্যে দেশের ব্যবসায়ীদের একধরনের কারসাজি থাকার অভিযোগ রয়েছে। উদার বাণিজ্য ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে কিছুস্বার্থান্বেষী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বাজারের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত করারঅপপ্রয়াসে লিপ্ত থাকে। অতীতে অনেকেই সময় ও সুযোগ বুঝে বাজারকে অস্থিতিশীলকরে তোলার নানারকম প্রয়াস চালিয়েছে। যোগসাজশের মাধ্যমে বাজার ব্যবস্থারস্বাভাবিক গতি যদি বাধাগ্রস্ত করা হয়, তবে একদিকে যেমন ভোক্তাস্বার্থেরহানি ঘটে, অন্যদিকে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিরূপ প্রভাব পড়ে।বিগত কয়েক বছরে সরকারের আন্তরিকতা ও নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণ সত্ত্বেওপণ্যের অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি রোধ করা যায়নি। দেশে প্রায় প্রতিটিখাদ্যদ্রব্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে।

সরকারের হিসাবেই গতএক বছরেচাল, আটা, ময়দা, ভোজ্যতেল, ডাল, পেঁয়াজ ও শিশুখাদ্যের দাম ৫ শতাংশ থেকে ৪৬শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।অর্থনৈতিক অব্যবস্থাজনিত কারণে মূল্যস্ফীতিঅব্যাহতভাবে বাড়তে থাকায় মানুষের দৈনন্দিন ব্যয়ের আকার স্ফীত থেকে স্ফীততরহচ্ছে- এ কথা বলাবাহুল্য। এর ফলে নির্দিষ্ট আয় ও পেশার মানুষের কষ্টওক্রমাগতভাবে বেড়ে চলেছে। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যেবাংলাদেশের মানুষ খুব দ্রুত তাদের ক্রয়ক্ষমতা হারাচ্ছে। বাংলাদেশপরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুযায়ী উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণেসাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। অতীতে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপরবেপরোয়াভাবে করারোপ করায় সঞ্চয়পত্র বিক্রি ব্যাপকভাবে কমে গিয়েছিলো।

মুনাফাকমিয়ে দেয়ায় একইভাবে এর আগে ব্যাংক থেকেও আমানতকারীরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো। এদিকটি যেমন সরকারের ভাবনায় থাকতে হবে, তেমনি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেওকার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সঞ্চয় করে কোনো সুফল পাওয়া না গেলে মানুষসঞ্চয়বিমুখ হয়ে উঠবে- এটাই স্বাভাবিক। এরকম ঘটলে তা দেশের অর্থনীতি ওসামাজিক জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনবে। এজন্য সঞ্চয়পত্রের সঠিক ব্যবস্থাপনারপাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মনোযোগ দিতে হবে।