সজিবের চলে যাওয়া দেখেও কি সজাগ হবো না আমরা?

 

                       সকলে সমাজের জন্য যেমন সমান অবদান রাখেন না, বা রাখতে পারেন না তেমনই সমাজ সকলকে সমান দৃষ্টিতে দেখে না। ফলে কারো কারো চিরপ্রস্থানে লাভ-ক্ষতির প্রশ্ন সমাজের কাছে বড্ড প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে।কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায় যখন কোন মেধাবীর তরতাজা রক্তে লাল হয়ে ওঠে পিচঢালা কালোপথ। যদিও আমরাই আমাদের চলাচলের রাজপথকে করে তুলেছি মৃত্যুপুরি। স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা দূরের কথা, রাস্তায় বের হয়ে কেউ-ই এখন আর নিরাপদে ফিরবেন তা বলতে পারেন না। অথচ সড়ক নিরাপদ করতে তথা সড়ক থেকে দানব তাড়ানোর আইন বিদ্যমান, আইন প্রয়োগের লোকবলও কম নেই। আম-আদমিদেরই ওদের বেতন দিতে হয়।

               একদিকে জনসংখ্যা বিস্ফোরণ, অন্যদিকে আইন না মানার প্রতিযোগিতা। এরপর দামাল ছেলে-মেয়েদের আনমনে পথচলা। এসবের জন্য দায়ী কে? অবশ্যই সমাজ, সমাজের ব্যবস্থাপনা। মুখে আমরা যাই বলি, কতটা সভ্য হতে পেরিছি তা আন্তর্জাতিক দৃষ্টিতে তথা বিশ্বমানের মাপকাঠিতে মাপলে লজ্জাটাই হবে প্রাপ্য। তা না হলে একজন মেধাবী শিক্ষর্থীকে কেনো স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার মতো পরিবেশ দিতে পারিনি? অবশ্যই বাইসাইকেলযোগে বন্ধুদের সাথে গল্প করতে করতে অন্যমনষ্ক হয়ে রাজপথ মাড়ানো উচিৎ নয়। এই উচিৎ-অনুচিত বড়দের তথা অভিভাবকদের কারো কারো কারণেই উঠতি বয়সী সকলকে বোঝানো দুষ্কর হয়ে দাঁড়ায়। একজন অভিভাবক যখন তার শিশু-কিশোর সন্তানের হাতে সেলফোন তুলে দিচ্ছেন তখন অন্য অভিভাবকও অনেকটা বাধ্য হয়ে পড়ছেন। একজন অভিভাবক যখন দামি মোটরবাইক কিনে দিচ্ছেন তখন অন্যকেও তার খেসারত দিতে হচ্ছে। কোন কোন অভিভাবকের অভিমত, সন্তানকে বদ্ধ ঘরে নয়, ওদের সব জানালাই খুলে দেয়া দরকার। যদিও সব জানালাই সব বয়সের জন্য প্রযোজ্য নয়। এসব প্রতিযোগিতা, উঠতি বয়সীদের যেমন সুপথে রাখতে হিমশিম দশা, তেমনই সড়কে আইন প্রয়োগের নূন্যতম তাগিদ পরিলক্ষিত না হওয়া পুরো পরিস্থিতিটাই যেনো অসভ্য করে তুলেছে।

                চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ সড়কের সরোজগঞ্জ সাদেমন নেছা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অদূরে দূরঘটনায় নবম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্র নিহত হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে প্রাকশিত প্রতিবেদনে বরা হয়েছে, শ্যালোইঞ্জিন চালিত অবৈধ যানের ধাক্কায় আছড়ে পড়ে বাইসাইকেল আরোহী মেধাবী ছাত্র বেপরওয়া গতির ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারায়। যে ছেলে তার শ্রেণির মেধাবীদের শীর্ষে, সেই ছেলে সজিবের অস্বাভাবিক মৃত্যু মেনে নেয়া কঠিন। আমরাও শোকাহত। এ ধরনের দুর্ঘটনা আর নয়। আর একজনও দুর্ঘটনায় নিহত হক কারোরই কাম্য হওয়া উচিৎ নয়। সড়ক যেমন নিরাপদ করতে হবে, তেমনই উঠতি বয়সীদেরও সড়ক সম্পর্কে সতর্ক করা জরুরী।