কে বলেছে ভালোর কদর কমেছে? সচেতনদের কাছে সব সময়ই ভালোটাই সমাদৃত। সে সবজি বাজারের সবজিই হোক, আর বিয়ের বাজারে বর বা কনেই হোক। ভালো সে ভালোই। যদিও চাকরির বাজারে যোগ্যতা মাপার মাপকাঠি বহুমুখি, তবুও যোগ্য তথা উপযোগী ভালোকে কি পড়ে থাকতে হয়? বিষয়টি উপলব্ধি করেই বোধ করি ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের নিয়ামতপুরে স্বাস্থ্যের জন্য ভালো শাক-সবজির বাজার গড়ে তোলা হয়েছে। এ বাজার যদি ভালোর মুখোশে খারাপের প্রশ্রয় না দেয়, তাহলে ভালো পেলে মন্দটা মানুষ কীভাবে পরিহার করে তা সবার সামনে দৃশ্যমান হয়ে উঠবে। ভালো সবজিকে খারাপ করার মানসিকতাও পরিহারে আন্তরিক হবেন উৎপাদক ও বাজারজাতকরণে সংশ্লিষ্টরা। কারণ ওরাও ভালো লাভের জন্যই উদগ্রীব।
সবজির আবাদ মানেই যেন কীটনাশকের অবাধ অপপ্রয়োগ। শুধু কি তাই? কীটনাশক প্রয়োগের পরদিনও সবজিক্ষেত থেকে তুলে বাজারে নেয়া হচ্ছে। ভোক্তারা অনেক সময় বুঝেও স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর কীটনাশকযুক্ত সবজি কিনছেন। তা খেয়ে কিডনিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলের দোকানে? ফরমালিন। মাছেও। অভিযোগ রয়েছে, মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ফরমালিন প্রয়োগের কারণে মাছবাজার থেকে মাছিও প্রায় উধাও। ক্ষেতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগের কারণে পাখপাখালিও হ্রাস পেয়েছে, পাচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে। এতে শুধু পরিবেশই ভারসাম্য হারাচ্ছে না, কীটনাশকযুক্ত সবজি খেয়ে মানুষ রোগাক্রান্ত হচ্ছে। বিষয়টি ভাবতেই গা শিউরে ওঠে। গুঁড়ো মসলার বাজারে? শুধু পোড়ামাটি নয়, আরো অনেক কিছুরই মিশ্রণ করা হয়। চাউল? দেশের কিছু চাল উৎপাদনকারী চাতাল মিল মালিক আছেন যারা চালে কুচিপাথর মিশিয়ে ওজনে বাড়ান। অথচ পড়শি দেশ থেকে আমদানি করা চালে ঝিল বলতে কিছুই মেলে না। তাছাড়া ধান এমন আর্দ্রতায় সিদ্ধ ও শুকিয়ে চাল করা হয়, ওই চালের ভাত অল্প সময়ে পচে না। এসব কারণে যে পড়শি দেশের চাল একটু বেশি দাম দিয়েই ভোক্তারা কিনছেন তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। ঠিক একইভাবে সবজিও যদি ক্ষতিকর কীটনাশকমুক্ত নিশ্চিত করে বাজারে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয় ভোক্তাসাধারণ সেদিকেই ছুটবেন। কারণ, ভালোর কদর বেশি। সকলে ভালোটাই চায়। চড়া দাম হলেও।
কীটনাশক প্রয়োগের অন্তত তিন সপ্তা পর সবজিক্ষেত থেকে তুলে বাজারজাত করা উচিত। বাস্তবে এ নিয়ম ক’জন মানেন? বাজারে কীটনাশকযুক্ত শাক-সবজি বিক্রি হলেও তা শনাক্তের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগেও তেমন সচেতনতা করার কর্মসূচি বাস্তবায়ন পরিলক্ষিত হয় না। অবশ্য কৃষক ও বাজারজাতকরণে সংশ্লিষ্টদের শুধু সচেতন করলেই হবে না, ভোক্তাদেরও সচেতন হতে হবে। ভালো মন্দের তফাত বুঝতে হবে। ভালোটা শনাক্তকরণের যন্ত্রও খুচরা বাজারে ছড়িয়ে দিতে হবে। উন্নত বিশ্বে ভালো-মন্দ শনাক্ত করে মন্দটা বাজারজাত করার সুযোগই দেয়া হয় না। যদিও আমাদের সমাজকে সে পর্যায়ে নিতে এখনও অনেক পথ হাঁটতে হবে। তার আগে সুস্থ সামর্থ্য অনুযায়ী তথা বাস্তবমুখি পদক্ষেপ নিতে হবে।