সচেতনতার আলো বহু রোগ বিতাড়িত করেছে, করছে

 

সাপ পরিবেশের জন্য উপকারী হলেও মানুষের সাথে তার আজন্মের বিরোধ। কেন? পাল্টাপাল্টি অক্রমণ তথা প্রাণ রক্ষার চেষ্টা। আর এ কারণেই সাপ আতঙ্ক দ্রুত ছড়ায়। শুধু সাপই নয়, যেকোনো বিষয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হলে দুর্বলচিত্তের মানুষ তাতে আক্রান্ত হয়েছেন ভেবে বাঁচার আকুতি জানান। আতঙ্কে আক্রান্তকে চিকিৎসা শাস্ত্রে গণহিস্ট্রিরিয়া বলা হয়। মাঝে মাঝে নানা রকম গুজবে কান দেয়ার কারণেও এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। আর তারই সুযোগ নেয় এক শ্রেণির ওঁঝা-কবিরাজ। মেহেরপুরের মদনাডাঙ্গায় বোধ করি তেমনটিই হয়েছে। আড়ালে যে অসচেতনতাও লুকিয়ে রয়েছে তা বলাই বাহুল্য। তা না হলে এক সময়ের ঝিনঝিনে রোগ এখন আর হয় না কেন? সচেতনতার আলো ওরকম বহু রোগ বিতাড়িত করেছে। করছে।

বিষধর সাপে দংশন করলেই মৃত্যু অনিবার্য হয়ে ওঠে না, বিষ প্রয়োগ করতে হয়। সকল সাপ বিষধর নয়। বিষধর সাপে দংশন করলেও অনেক ক্ষেত্রেই বিষ প্রয়োগ করতে পারে না। বিষধর নয় অথবা বিষ প্রয়োগ করেনি এরকম দংশিত রোগীকে মন্ত্রতন্ত্র জপে কেটে-ছিঁড়ে সুস্থ করার নাটক করে অর্থ হাতিয়ে নেয় একশ্রেণির ওঁঝা-কবিরাজ। তাতেই বিশ্বাস জন্মায় সাধারণ মানুষের। বিষ প্রয়োগ করেছে এমন দংশিত রোগীকে ঝাঁড়ফুঁকে বা কাটা-ছেঁড়ায় সুস্থ করতে না পারলেও পুরোনো বিশ্বাসে ওঁঝা কবিরাজের নিকট নিয়ে অনেকেরই মৃত্যু অনিবার্য করে তোলেন নিকটজনেরাই। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় এ সংক্রান্ত প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার কয়রাডাঙ্গা ঈদগাপাড়ার একজন মাঠে ঘাস কাটতে গেলে সর্প দংশনের শিকার হন। শরীরের প্রয়োজনীয় স্থানে বাঁধন দিয়ে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার বদলে নেয়া হয় ওঁঝা-কবিরাজের নিকট। সেখানে ঝাঁড়ফুঁক নাটকে তথা অপচিকিৎসায় পেরিয়ে যায় সুস্থ করে তোলার মতো সুচিকিৎসার সুযোগ। তাকে যখন হাসপাতালে নেয়া হয় তখন ভ্যাকসিন দিয়ে সুস্থ করে তোলার মতো ছিলো না। অপরদিকে মেহেরপুরের মদনাডাঙ্গায় সাপ আতঙ্ক ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আতঙ্কে গণহিস্ট্রিরিয়ায় আক্রান্ত শিশু-কিশোর নারী-পুরুষদের নিয়ে স্থানীয় ওঁঝা-কবিরাজের দল অর্থবাণিজ্যে মেতেছে। সকলেই যে আতঙ্কে আক্রান্ত তাও ধরে নেয়া উচিত নয়। ওঁঝা-কবিরাজের নিকট নিয়ে অপচিকিৎসা হলেও আক্রান্ত ব্যক্তি হারানো সাহস ফিরে পেয়ে স্বাভাবিক হচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু প্রকৃত অর্থেই যদি বিষধর সাপে দংশন করে এবং বিষ প্রয়োগ করে তা হলে তো ওই ওঁঝা-কবিরাজের অপচিকিৎসায় মৃত্যু অনিবার্য হয়ে উঠবে না-কি? সে কারণেই ওঁঝা-কবিরাজ পরিহার করে সুচিকিৎসার জন্য হাসপাতালমুখি হওয়াই শ্রেয়।

অবশ্যই পূর্বের যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে সর্প দংশিত রোগীর মৃত্যুর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। কারণ, অপচিকিৎসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে অধিকাংশই হাসপাতালের দিকে ছুটছেন। সর্প দংশিত রোগীর সুচিকিৎসা এক সময় হাসপাতালে থাকলেও তা প্রয়োগে তেমন আগ্রহ পরিলক্ষিত হতো না। রেফার করার কারণে ওঁঝা-কবিরাজের কাছে ছুটেই বাকিটা ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিতেন অনেকে। বর্তমানে সে পরিস্থিতি নেই। চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসার নিশ্চয়তা রয়েছে। অবশ্য চিকিৎসকদের আন্তরিকতা এখন পর্যন্ত কিছুটা হলেও প্রশ্নবিদ্ধ বটে। এরপরও সাপে কাটা ওঁঝা-কবিরাজও যখন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন তখন সাধারণ মানুষ কেন ওঁঝা-কবিরাজের কাছে প্রতারিত হবেন? দরকার সচেতনতা।