সকলের ভালোবাসায় ধরিত্রী হয়ে উঠুক আরও মায়াময়ী

৩৬৫ দিনই যদি উৎসবের দিন হয়, প্রতিটি মুর্হূত যদি হয় ভালোবাসার তাতে দোষের কী? প্রত্যেকে প্রতিটি দিন যেমন একভাবে পান না, সকলের ক্ষেত্রে আসেও না যেমন, তেমনই সবগুলো দিন একই বর্ণে সাজানোও বোকামি। তবে দিনগুলো যদি সুন্দর করা যায়, প্রতিটি প্রভাতই যদি প্রত্যেকে নিজের মতো করে বর্ণিল করতে পারে সেটাই ভালো। তাতে ধরিত্রীর উৎসাহে কমতি থাকে না, ঠিক সন্তানের ক্ষেত্রে মায়েরই মতন।
আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। দিবসটিকে যারা সুন্দর করতে চান তাদের কাছে সুন্দর হয়ে আসাই স্বাভাবিক, আর যারা পশ্চিমা সংস্কৃতি বলে কিংবা ধর্মের বর্ণে বিবর্ণ করতে চান তাদের ক্ষেত্রে দিনটা তাদেরই মতই হোক। তবে একদিনের জন্য হলেও যদি একজন বন্ধু তার বন্ধুকে ভালোবাসতে একটু হাত বাড়ায়, একটা উপলক্ষ্যকে কেন্দ্র করে হলেও যদি ভুলে ধা সন্তান তার মা-বাবাকে ভালোবাসতে অনুপ্রাণিত হতে চান তা হলেও কি তাকে কোনোভাবেই সংকীর্ণতার বেড়াজালে আটকানো উচিত হবে? এরও পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি আছে। ভালোবাসাকে কেন্দ্র করেই মানুষ বেড়ে ওঠে। ফলে ভালোবাসার কাঙাল মূলত সকলে। ফলে ভালোবাসা দিবস প্রতিদিন, প্রতি মুর্হূত হওয়াই উচিত। যদিও বছর ঘুরে ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটি আমাদের ভালোবাসায় রাঙিয়ে গেলেও, ভালোবাসা কিন্তু প্রতিদিনের। জীবনের গতি নির্ধারণ করে ভালোবাসা। মানুষ বেঁচে থাকে ভালোবাসায়। ‘ভালোবাসা’ পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর কোমল দূরন্ত মানবিক অনুভূতি। ভালোবাসা নিয়ে ছড়িয়ে আছে কতো কতো পৌরাণিক উপাখ্যান। সাহিত্য-শিল্প-সংস্কৃতি সর্বত্রই পাওয়া যায় ভালোবাসার সন্ধান। আর তাই ১৪ ফেব্রুয়ারি মানেই প্রজন্মের কাছে একটি কাক্সিক্ষত দিন। দুনিয়াজুড়ে দিনটিকে অত্যন্ত আগ্রহ ও আনন্দের সঙ্গে পালন করা হয়ে থাকে। তারুণ্যের অনাবিল আনন্দ আর বিশুদ্ধ উচ্ছ্বাসে সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও দিনটি নিয়ে থাকে বেশ মাতামাতি। অবশ্য আমাদের দেশে তথা সমাজে খুব বেশিদিন আগে নয়, ১৯৯৩’র দিকেই আমাদের দেশে দিবসটি পালন শুরু হয়।
কী এই ভ্যালেন্টাইনস ডে? কীভাবে তার উৎপত্তি? কেনই বা একে ঘিরে ভালোবাসা উৎসবের আহ্বান? প্রশ্নগুলোর উত্তর নিয়ে আছে নানা জনের নানা মতো। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ইতিহাসটি হচ্ছে ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের। ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ছিলেন শিশুপ্রেমিক, সামাজিক ও সদালাপী এবং খ্রিস্টধর্ম প্রচারক। আর রোমসম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস ছিলেন বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজায় বিশ্বাসী। স¤্রাটের পক্ষ থেকে তাকে দেব-দেবীর পূজা করতে বলা হলে ভ্যালেন্টাইন তা অস্বীকার করায় তাকে কারারুদ্ধ করা হয়। সম্রাটের বারবার খ্রিস্টধর্ম ত্যাগের আজ্ঞা প্রত্যাখ্যান করলে ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয় আদেশ লঙ্ঘনের দায়ে ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদ- প্রদান করেন। সেই থেকেই দিনটির শুরু। এছাড়া আরও একটি প্রচলিত ঘটনা আছে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে নিয়েই। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন কারারুদ্ধ হওয়ার পর প্রেমাসক্ত যুবক-যুবতীদের অনেকেই প্রতিদিন তাকে কারাগারে দেখতে আসতো এবং ফুল উপহার দিতো। সম্রাটের কানে গেলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ২৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাকে মৃত্যুদ- দেন। খ্রিস্টীয় ইতিহাস মতে, ২৬৯ খ্রিস্টাব্দের সাম্রাজ্যবাদী, রক্তপিপাষু রোমান সম্রাট ক্লডিয়াসের দরকার এক বিশাল সৈন্যবাহিনীর। ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি সৈন্যরা ভ্যালেন্টাইনকে হাত-পা বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে সম্রাটের সামনে হাজির করলে তিনি তাকে হত্যার আদেশ দেন। আরেকটি খ্রিস্টীয় ইতিহাস মতে, গোটা ইউরোপে যখন খ্রিস্টান ধর্মের জয়জয়কার, তখনও ঘটা করে পালিত হতো রোমীয় একটি রীতি। মধ্য ফেব্রুয়ারিতে গ্রামের সকল যুবকরা সমস্ত মেয়েদের নাম চিরকুটে লিখে একটি পাত্রে বা বাক্সে জমা করতো। আরেকটি মতে, প্রাচীন রোমে দেবতাদের রানি জুনোর সম্মানে ১৪ ফেব্রুয়ারি ছুটি পালন করা হতো। রোমানরা বিশ্বাস করতো যে, জুনোর ইশারা-ইঙ্গিত ছাড়া কোনো বিয়ে সফল হয় না।
ভালোবাসা দিবস হোক সকলের জন্য সকলের। ভালোবাসা দিবসকে উপলক্ষ্য করে হলেও বিশ্বের সকল মানুষ যদি একে অপরকে ভালোবাসার প্রতিযোগিতায় সামিল হতে পারতেন তা হলে কতো সুন্দরই না হতো। এ প্রতিযোগিতার সূত্রপাত হোক না আমাদের সমাজ থেকেই। বন্ধুত্ব যেমন পরিচর্যায় প্রাণবন্ত হয়, তেমনই সকলেই সকলকে ভালোবেসে ভালো হলে ধরিত্রীটা অবশ্যই পাবে উজ্জ্বলতা।