সংযম-সাধনার আহ্বান নিয়ে হাজির মাহে রমজান

 

সংযম-সাধনার আহ্বান নিয়ে হাজির মাহে রমজান। আহলান-সাহলান শাহরু রমাদান। যারা ঈমানদার, তাদের জন্য মহান আল্লাহতায়ালা রমজান মাসের রোজা অত্যাবশ্যকীয় বা ফরজ করে দিয়েছেন। বিশ্বাসীদের জন্য এটা সহজও করে দিয়েছেন। পালনকর্তা আল্লাহ সাধ্যের অতিরিক্ত কোনো বোঝা চাপান না মানুষের ওপর। পবিত্র কোরআনে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে। রোজা সম্পর্কে সূরা বাকারায় আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, তোমরা পানাহার করতে পারো যতোক্ষণ না রাতের কৃষ্ণরেখা মুছে ভোরের শুভ্ররেখা বের হয়ে আসে।

সিয়াম সাধনার মধ্যে রয়েছে বিশেষ কল্যাণ। আল্লাহতায়ালা মানুষকে রহমত অন্বেষণের উপদেশ দেন। বলাই বাহুল্য, মাহে রমজানের মধ্যে রয়েছে রহমত, বরকত ও নাজাত বা মুক্তি। পবিত্র এ মাসে অবতীর্ণ হয়েছে আল কোরআন। আর এই কোরআন দিয়েছে পথের দিশা, যা পরিপূর্ণ জীবনবিধান। এ মাসেই অন্তর্লীন হয়ে রয়েছে মহিমান্বিত লাইলাতুল কদর। সিয়াম সাধনা বা রোজা পালনের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জন। সুরা বাকারার ১৮৩ নং আয়াতে এ উদ্দেশের কথা উল্লেখিত হয়েছে। মহান আল্লাহর প্রতি প্রীতি বা ভালোবাসা না জন্মালে এই গুণার্জন করা সম্ভব নয়। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রোজার আলাদা একটি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। সারাদিন পানাহার ও জৈবিক চাহিদা হতে বিরত থাকতে হয় বলে এতে লোক দেখানোর অবকাশ কম। কিন্তু রোজার ক্ষেত্রে যা অসম্ভব। তাই বলা হয়েছে, আসসওমু লি ওয়া আনা আজজি বিহি অর্থাত্ আল্লাহ পাক বলছেন, রোজা কেবল আমার সন্তুষ্টির জন্যই রাখা হয়। তাই এর পুরস্কারও আমি নিজ হাতে দেবো। তাছাড়া বিশ্বমানবতার আলোকবর্তিকা কোরআনুল কারিম নাজিলের মাস রমজানের গুরুত্ব সর্বাধিক। অন্য আসমানি কিতাবগুলোও এ মাসে অবতীর্ণ হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সিয়াম সাধনা হচ্ছে একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ। এর মাধ্যমে রোজাদারের জীবনযাপনে ফিরে আসে শৃঙ্খলা। বছরের পরবর্তী মাসগুলো নিয়মানুবর্তিতার ধারাটি অব্যাহত রাখতে সহায়ক হয়। এ মাসের সংযম ও কৃচ্ছ্রতাসাধনের দ্বারা একজন মুসলিম ব্যক্তিগত জীবনেও সাফল্য অর্জন করেন। তাছাড়া স্বাস্থ্যক্ষেত্রেও রোজা সুফলদায়ী। রোজার সময় পরিপাকতন্ত্র যে অবসর পায় তাতে দেহের অপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের সারাংশ ও সঞ্চিত বিষাক্ত রস নিঃশেষ হয়ে যায় বলেও দাবি করা হয়। দেহের বাড়তি ওজন, কলেস্টোরেল ইত্যাদি হ্রাস পায়।

সিয়াম বা সওমের মূল কথা হলো- আল্লাহর পথে সংযম সাধনা। একজন রোজাদারের জন্য জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সংযমের পরিচয় রেখে যাওয়া একান্ত কর্তব্য। হিংসা, লোভ-লালসা, প্রতারণা, অপচয়সহ যাবতীয় অন্যায়-অনাচার থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা সংযমের অংশ। সর্বক্ষেত্রে ধৈর্য ও সংযমের পরিচয় দিতে না পারলে রোজার দাবি পূরণ হয় না। বাজারে এবং আরও অনেকক্ষেত্রে তার প্রতিফলনও কম পরিলক্ষিত হয় না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সহিহ সালামতে পূর্ণ এক মাস সিয়াম পালনের তওফিক দিন। আমিন!