শোকে কাতর নয় সন্ত্রাসের বিষদাঁত ভাঙার অঙ্গীকারে অবিচল

কে বলেছে সমাজ সন্ত্রাসমুক্ত হয়েছে? বাঘা বাঘা অস্ত্রবাজের পতন হলেও ছিঁচকে অসংখ্য গ্যাং যে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এখনও বিরাজমান তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। মাদক আর ছিঁচকে গ্যাং যেন একই সুতোয় গাঁথা। আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে এরকমই এক গ্যাঙের নৃশংসতার শিকার হন দৈনিক মাথাভাঙ্গার মোমিনপুর প্রতিনিধি সদরুল নিপুল। সহকর্মী নিপুলের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতেই শুধু তাকে স্মরণ নয়, মাথাভাঙ্গা পরিবার তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণে রেখে নৃশংস হত্যার ন্যায় বিচারের প্রহর গোনে। শোকে কাতর না হয়ে মাথাভাঙ্গা পরিবার সন্ত্রাসের বিষদাঁত ভাঙার অঙ্গীকারে অবিচল।

উন্নয়নশীল সমাজে সন্ত্রাসের মূল উৎপাটন অলিক হলেও দমিয়ে রাখা অসম্ভব নয়। সন্ত্রাসমুক্ত দুরস্ত, দমানো গেছে কতোটা সেটা সবসময়ই প্রাসঙ্গিক। খুনি, চাঁদাবাজ, ডাকাত, ছিনতাইকারী, সরকারি সম্পদ লুণ্ঠনকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে আইন প্রয়োগ করা সম্ভব হলে সমাজে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। সাংবাদিক সদরুল নিপুল যাদের নৃশংসতার শিকার হন, তারা বাংলাদেশ রেলওয়ের মোমিনপুর স্টেশনে আধিপত্য বিস্তার করে রেলওয়ের সম্পদ লুটপাট করে আসছিলো। তাদের বিরুদ্ধে কলম ধরায় প্রাণ দিতে হয়েছে সাংবাদিককে। এক বছর ধরে মামলাটি রেলওয়ের পোড়াদহ থানা পুলিশের হাতে তদন্তাধীন। প্রাপ্ত তথ্য অনযায়ী, ইতোমধ্যে দুজন তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে একজন সাব ইন্সপেক্টর তদন্ত করছেন। মামলার মূল আসামি বোয়ালমারীর ক্যাপ্টেন ঢাকায় ছিনতাই করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। ছিনতাইয়ের কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিলেও সাংবাদিককে হত্যা করে রেললাইনে ফেলে ট্রেনে কেটে মৃত্যু বলে চালানোর ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে গ্রেফতার এড়ানোর জন্য ঢাকায় আত্মগোপন করেছে তা অবশ্য স্বীকার করেনি। যদিও সদরুল নিপুল হত্যা মামলায় তাকে গত ১০ এপ্রিলই শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় নেয়ার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। অপরদিকে ঘটনার পর দুজনকে গ্রেফতার করা হলেও তাদের মুখ থেকে তেমন তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। মোমিন ও নিতাই দুজনই জামিনে। ক্যাপ্টেনের সেই চিহ্নিত সহযোগীরা আত্মগোপনে।

যে গ্যাং সাংবাদিক সদরুল নিপুলকে হত্যা করে তাদের আস্তানা আরো নিরাপদ করার পাশাপাশি সরকারি সম্পদ নির্বিঘ্নে লুটপাটের পরিবেশ গড়তে চেয়েছিলো, সেই গ্যাং উড়োতাড়া। এতেই কি যথেষ্ট? অবশ্যই না। খুনিচক্রের উপযুক্ত শাস্তি হতে হবে। সমাজকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে নিতে যে সাংবাদিকেরা জীবনবাজি রেখে কলম ধরেন, সেই সাংবাদিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি সমাজের সাধারণ মানুষগুলোকেও গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। সমাজের স্বার্থেই গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। দরকার সাংবাদিক নিপীড়ন, নির্যাতন ও হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার তরান্বিত করা।