শুভক্ষণে সকলকে শুভেচ্ছা অফুরন্ত ভালোবাসা

 

 

শুরুটা হাঁটি হাঁটি পা হলেও সাবালকে মেরুদণ্ডটা বেশ শক্ত। বহু চড়াইউতরাই, বেড়াজাল-ঘেরাটোপ মাড়িয়ে দৈনিক মাথাভাঙ্গা আজ পদার্পণ করলো দু’যুগে। একটি দুটি বছর নয়, ১৯৯১ সালের আজকের এই দিন তথা ২৩ বছর আগে ১০ জুন থেকে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় দৈনিক মাথাভাঙ্গার। এর আগে একই বছরের ২৬ মার্চ প্রকাশিত হয় প্রস্তাবিত সংখ্যা। তখন চুয়াডাঙ্গার মতো একটি শহর থেকে দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ এবং তার ধারাবাহিকতা রক্ষা অনেকেরই দৃষ্টিতে ছিলো দিবাস্বপ্ন। সেই অসম্ভবকে সম্ভব করতে তারুণ্যে ভরা একদল টগবগে যুবক নেমে পড়ে যুদ্ধে। সেই যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধ সমাজ থেকে কুসংস্কার নামক অন্ধকার তাড়ানোর যুদ্ধ। এ যুদ্ধ প্রগতির প্রকৃত আলোয় আলোকিত সমাজ গঠনের যুদ্ধ। এ যুদ্ধ সন্ত্রাস মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের যুদ্ধ। এ যুদ্ধ শুধু চুয়াডাঙ্গার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি, এ যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছে মেহেরপুর, ঝিনাইদহসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায়। দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকা আঞ্চলিক পত্রিকায় উন্নীত শুধু একদল যুবকের গচ্ছিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের যুদ্ধে নয়, এলাকার সকল পাঠক, শুভানুধ্যায়ী ও বিজ্ঞাপনদাতাদের অকৃত্রিম সহযোগিতায়। দৈনিক মাথাভাঙ্গার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভক্ষণে সকলকে শুভেচ্ছা, সশ্রদ্ধ সালাম, অফুরন্ত ভালোবাসা।

দৈনিক মাথাভাঙ্গা পেরেছে, পারেনি, পারতো, পারবে। কতোটুকু পেরেছে, কতোটা পারেনি, কেন পারেনি, কতোটা পরার মতো আশা জাগিয়েছে তা বিচারের ভার অবশ্যই পাঠককুলের। চরম সংকটে পাঠককূলই যেমন মাথাভাঙ্গা পরিবারকে সাহস জুগিয়েছে, তেমনই অগ্রযাত্রায় পাঠকের অনুপ্রেরণার পাথেয়। মাথাভাঙ্গা পরিবার প্রতিদিন প্রতি প্রাতে পাঠকের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে স্বপক্ষে রায়ের প্রহর গুনেই পেরিয়েছে এতোগুলো দিন, মাস, বছর, যুগ। সময়ের সিঁড়ি বেয়ে আবার সময় বলে- দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নয়, বিগত দিনের অভিজ্ঞতায় বলিয়ান হয়ে বুক চেতিয়ে অনন্তকাল পাড়ি দেয়ার স্বপ্ন দেখে মাথাভাঙ্গা। সন্ত্রাস দমনে মাথাভাঙ্গা পরিবারের অগ্রণী ভূমিকা, অবৈধ বন্দুকের চকচকে নলের মুখেও সত্য প্রকাশে পিছুপা না হওয়ার কারণেই শুধু নয়, গণমানুষের মনের কথা বলেই মাথাভাঙ্গা অসংখ্য পাঠকের হৃদয়ে ঠাই করে নিয়েছে। নিরপেক্ষতার মতো প্রতারণাকর প্রত্যয়ে গণ্ডিবদ্ধ না থেকে ন্যায়ের পক্ষে কথা বলেই মুক্ত চিন্তার খোরাক জোগানোর মূলমন্ত্র মূলত চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ কুষ্টিয়ার একাংশের অসংখ্য পাঠকই শিখিয়েছেন। যে শিক্ষা মাথাভাঙ্গা পরিবারকে করেছে দায়িত্বশীল। সে কারণে প্রকাশনার দু যুগে পদার্পণের শুভক্ষণে স্বীকার করতে কোনো দ্বিধা নেই যে, মাথাভাঙ্গা পরিবারের সফলতার সবটুকু কৃতিত্বই পাঠক সমাজের। সকলের সহযোগিতার ধারা অব্যাহত থাকলে বিগত দিনের ব্যর্থতা, ত্রুটি সুধরে মাথাভাঙ্গা পরিবারের এতোদিনে না পারা কাজগুলোও আগামীতে পারার মতো সক্ষম হবে নিশ্চয়।

দৈনিক মাথাভাঙ্গার প্রকাশনা উৎসবকে এবার কেন উল্লাসে ভরপুর নয়? এইতো সেদিন মাথাভাঙ্গা পরিবার তার অন্যতম সদস্য মোমিনপুর প্রতিনিধি সদরুল নিপুলকে হারালো। গত বছর হারিয়েছে প্রধান সম্পাদক সাইফুল ইসলাম পিনুকে। তার আগের বছর গত হয়েছে প্রধান সম্পাদক সাইফুল ইসলাম পিনু পত্নি মমতাকে হারানোর কষ্ট নিয়ে। এবারের প্রকাশনা উৎসবের উল্লাস মূলত তাদের স্মরণে, তাদের স্মৃতির প্রতিই উৎসর্গিত। যে মাথাভাঙ্গার যাত্রা শুরু হয় লেটারহ্যান্ড কম্পোজে, সেই মাথাভাঙ্গা এখন নিজস্ব অফসেট ছাপাখানায় ছেপে পাঠকদের হাতে পৌঁছায়। রঙিনের স্বপ্ন লালন করলেও আয়োজনে পূর্ণতায় ঘাটতির কারণে গুনতে হচ্ছে অপেক্ষার প্রহর। প্রতীক্ষার পালা একদিন নিশ্চয় শেষ হবে। একদিন অবশ্যই চার রঙের ঝকমকে সাজ নিয়েই হাজির হবে মাথাভাঙ্গা। সেদিন খুব বেশি দেরি নয়।

মাথাভাঙ্গার যাত্রাপর্বে স্বপ্ন লালনের কৃতীপুরুষগুলোর কেউ কেউ অনেক দূরে। মাথাভাঙ্গার অগ্রযাত্রায় অবদান রেখে চলেছেন অসংখ্য মানুষ। মাথাভাঙ্গা ছাপার মতো উপযোগী, ছাপা এবং পাঠকদের হাতে পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত অসংখ্য মানুষের মেধা এবং শ্রম দিতে হয়। যারা এসব কাজগুলো দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করেন তাদের আন্তরিকতার ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে মূলত পাঠককূলের অকৃপণ উৎসাহেই। ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে দৈনিক মাথাভাঙ্গা ইন্টারনেটের মাধ্যমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ছাপাখানা থেকে শহীদ হাসান চত্বরে পৌঁছুনোর আগেই পৌঁছে যায় আমেরিকা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকাসহ এশিয়া মহাদেশের সকল দেশে। mathabhanga.com কাছের দূরের সকল প্রবাসীকেই করেছে এলাকারই বাসিন্দা। মাথাভাঙ্গার শুভ জন্মদিনে কাছের দূরের সকলকে শুভেচ্ছা। যারা আমাদের মাঝে নেই, পরলোকে, তাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা। দৈনিক মাথাভাঙ্গার শুভদিনে আবারো সকলকে শুভেচ্ছা।