শিশু সন্তানের সামনে পিতাকে মারধর এবং

সামান্য স্বার্থে মানুষ যখন হিংস্র হয়ে ওঠে, তখন বন্যপ্রাণীর সাথেও কি মানুষের তুলনা করা চলে? বনের অধিকাংশ প্রাণীই আক্রমণের শিকার হতে পারে আশঙ্কায় হামলা করে। মানুষ? জমি-জমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার উদাহরণ তো ভুরিভুরি। এইতো সেদিন চুয়াডাঙ্গা গাড়াবাড়িয়ার দুটি পরিবারের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধের জের চুয়াডাঙ্গা শহরে ৮ বছরের এক শিশুর সামনে তার পিতাকে মারপিট করা হয়েছে। শিশুও রক্ষা পায়নি। অনেক ক্ষেত্রেই পায় না। এ ঘটনাকে ঠিক কার বা কীসের সাথে তুলনা করা যায়?
অবশ্যই কোনো মানুষ অনন্তকাল থাকে না, থাকে না তার সম্পদ সম্পতিও। পৈত্রিক সম্পদ সম্পতিও কি বংশপরমপরায় তথা ছেলের ছেলেরা ঠিক মতো ধরে রাখতে পারে? পৈত্রিক বা পূর্বপুরুষের রেখে যাওয়া জমা-জমির দিকে তাকিয়ে নিজেকে অকর্মা করার চেয়ে নিজের পায়ে নিজের দাঁড়ানোটাই কি শ্রেয় নয়? সামান্য জমি নিয়ে লাঠালাঠির চেয়ে সমঝোতার ভিত্তিতে মিলেমিশে বসবাস যতোটা স্বস্তি দিতে পারে, কাড়াকাড়িতে মেতে উল্টোটাই জোটে। সমাজের বাস্তব এই ছবি দেখেও কেন যে মানুষ হিংসার আগুনে জ্বালায় ও জ্বলে? তবে হ্যাঁ, ছাড় পেলে কেউ কেউ পুরোটাই গিলে খাওয়ার মতো হাঁ করে। সে কারণে ন্যায় প্রতিষ্ঠায় কখনো কখনো রুখে দাঁড়াতে হয়। তাই বলে পেশিশক্তি প্রয়োগ নয়, সমাজে তথা দেশে প্রচলিত আইনের মাধ্যমেই ন্যায় প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করতে হয়। যদিও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করতে আইন প্রয়োগে নিয়োজিতদেরও আন্তরিক হতে হয়।
শিশুর সামনে তার পিতাকে মারপিট করার ঘটনাটি কোনোভাবেই খাটো করে দেখা উচিত নয়। কারণ, শিশুর সামনে অন্যের হিংস্রতার কুপ্রভাব তার মধ্যেও পড়ে। যার খেসারত সমাজকেই দিতে হয়। ফলে এ ধরনের ঘটনার দায় সমাজের ওপরও বর্তায়। যে ঘটনা সমাজের জন্য ক্ষতির কারণ হয়, সেই ঘটনা দেখেও সমাজের সাধারণ মানুষ যদি মুখ ঘুরিয়ে রাখে তখন বুঝতে বাকি থাকে না, সমাজ আসলেই রশাতলে যাচ্ছে। সমাজের এ অনিবার্য পতন রুখতে না পারলে জাতি সুস্থ মানসিকতার প্রজন্ম পাবে কীভাবে?