শিশু শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে ভর্তি পদ্ধতি হোক বিতর্কমুক্ত কল্যাণকর

 

চুয়াডাঙ্গার শিক্ষানুরাগী অভিভাবকমহল সেই শুরু থেকেই বলে আসছে, জেলার সরকারি দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির পদ্ধতিতে কিছুটা পরিবর্তন প্রয়োজন। তা না হলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সমাপনীতে অংশ নেয়ার পর তাদের সিংহভাগই ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। কারণ চুয়াডাঙ্গা সরকারি ভি.জে উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় দুটির প্রভাতী ও দিবা বিভাগে মোট ৪টি করে শাখায় তৃতীয় শ্রেণিতেই শিক্ষার্থী ভর্তি করে নেয়া হচ্ছে। ফলে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে হাতে গোনা কয়েকটি মাত্র আসনে ভর্তির সুযোগ থাকছে। অথচ পার্শ্ববর্তী জেলা মেহেরপুরের সরকারি দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় ও ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করা হয় প্রায় সমান হারে। ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা যেমন ভর্তি পরীক্ষায় প্রত্যাশা পূরণের স্বপ্ন নিয়ে অংশ নিতে পারছে, তেমনই তৃতীয় শ্রেণিতে সেই ভর্তির যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হলেও নতুন করে লেখাপড়ায় মনোনীবেশে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির স্বপ্ন তথা লক্ষ্য নিয়ে নিজেকে গড়ার পরিবেশ পাচ্ছে। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন- চুয়াডাঙ্গায় তা কেন নয়? কারো ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে হলে তা দ্রুত বাতিল করতে হবে। পদ্ধতিগত হলে ত্রুটিমুক্ত করা জরুরি।

‌            সকল শিশুর মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে সম্ভাবনা। মানসিক প্রতিবন্ধী বা বিকারগ্রস্ত না হলে মেধায় তেমন তারতম্যও থাকে না। বিকাশের বেলায় কেউ টেনেটুনে পাস, কারো ফলাফল ভালো বা খুব ভালো। কেন? লেখপড়ায় মনোনীবেশের পরিবেশ। সেটা শুধু পরিবারে থাকলে যেমন চলে না, তেমনই শুধু বিদ্যালয়ের বেলায় বিবেচ্য নয়। উভয়ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তাহলে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হয় কেন? কারণ ভর্তিচ্ছুর সংখ্যা আসনের তুলনায় বেশি। সে কারণে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে তুলনামূলক লেখাপড়ায় মনোনীবেশ শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে যোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়। তাদের ভর্তি করা হয়। আর যদি আসন সংখ্যার মধ্যেই সীমিত থাকে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর সংখ্যা? তাহলে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার কথা নয়। কেননা, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় তো আর শুধু ভালোদের লেখাপড়া করানোর জন্য নয়। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর সংখ্যা যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেই হারে সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেমন বাড়ছে না তেমনই জেলা উপজেলা পর্যায়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মান সম্পন্ন শিক্ষাদানের প্রতিযোগিতা পরিলক্ষিত হয় না, হচ্ছে না। অভিভাবকদের মধ্যে তেমন আস্থাশীল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকার কারণে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির চাপ বেড়েই চলেছে। এ চাপ হ্রাসে যেমন দরকার বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতেও শিক্ষার মানবৃদ্ধি, তেমনই দরকার জাতীয়করণে বাস্তবমুখি পদক্ষেপ। অবশ্য বর্তমান সরকার শিক্ষার মানবৃদ্ধিসহ জেলা উপজেলা পর্যায়েও শিক্ষাগ্রহণের সুযোগসহ করার নানামুখি উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়াও ভর্তিতেও এলাকার গুরুত্ব অনুধাবনে আন্তরিক হয়ে উঠেছে। সেটাই হওয়া উচিত। তা না হলে বাড়ির কাছের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রেখে দূরের বিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়ার মনোকষ্ট মেধা বিকাশে অন্তরায় হওয়া অমূলক নয়। একই সাথে শুধুমাত্র তৃতীয় শ্রেণিতে আর ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে নামমাত্র হাতে গোনা কয়েকটি আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি পদ্ধতি পরিবর্তনের দাবি উপেক্ষিত হোক তা আশা করা যায় না।

প্রায় সর্বক্ষেত্রেই যুক্তি উভয়পক্ষেরই থাকে। কম আর বেশি। কোনটি কল্যাণ বয়ে আনে, কোনটি পতনের দিকে টানে তা উপলব্ধি করতে পারাটাই দূরদর্শিতা। চুয়াডাঙ্গা জেলায় সরকারি দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রভাতী ও দিবা বিভাগে তৃতীয় শ্রেণিতে মোট ৪টি করে শাখায় ৬০ জন করে ২৪০ জন ভর্তি করা হয়। এতে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেও ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভালো বিদ্যালয় বলে খ্যাতি অর্জন করা সরকারি দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারার বিষয়টি সফেদ মগজে কষ্টের দাগ পড়া নয় কি? অবশ্যই কিছু ব্যর্থতার কষ্ট নতুন করে লক্ষ্যে পৌঁছুনোর পথ বাতরে দেয়। কিছু কষ্ট গড্ডালিকায় গা ভাসানোর মতো মানসিকতা গড়ে তোলে। বোধকরি সে কারণেই জন্মহার অনুপাতে মেধাবীর সংখ্যা হতাশাজনক। হাহুতাশে হাবুডুবু খাওয়ার বদলে শিক্ষাদানে দায়িত্বশীলদের দূরদর্শী হতে হবে। সমাজের জন্য কল্যাণকর পথ বাতলে জাতিকে এগিয়ে নিতে হবে। তবেই না কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের সোনার বাংলা পূর্ণতা পাবে। এবারও চুয়াডাঙ্গায় গত কয়েক বছরের মতোই ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শুরু হয়েছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে আবেদন। ভর্তি পরীক্ষা হোক শতভাগ স্বচ্ছ। তৃতীয় ও ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি পদ্ধতিও হোক বিতর্কমুক্ত কল্যাণকর।