শিশু-কিশোরদের সুপথে রাখতে দরকার গতানুগতিকতার পরিবর্তন

কিশোরীদের অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ের আসনে বসানোর তথা বাল্য বিয়ের জন্য বখাটেদের যৌনহয়রানি বা উৎপাত বহুলাংশে দায়ী। বখাটেরা কারা? তারা অবশ্যই সমাজের কারো না কারো সন্তান। ওরা বখাটে কেন? এ প্রশ্নের জবাব যতোটা গুরুত্বের সাথে খোঁজা না হয়, তার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি, তা হলো আইনের দৃষ্টিতে শাস্তি। অবাক হলেও সত্য যে, স্কুলছাত্রীকে উত্ত্যক্ত বা যৌন হয়রানির অভিযোগে স্কুলছাত্রকে কারাদ-ও দেয়া হচ্ছে দেদারছে। বিধান। আইন প্রয়োগই যখন দায়িত্ব, তখন দ-দাতার আর কী দোষ? কিশোরকে গাছে বেঁধে পিটুনিও গা সওয়া। যদিও দেশ বিদেশের সস্তা বস্তপচা গতানুগতিক গল্পের নাটক সিনেমা দেখে কিশোর-কিশোরীদের অধিকাংশই নিজেকে নায়ক-নায়িকা ভাবতে গিয়ে সর্বনাশের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
নাটক-সিনেমায় নায়ক রাস্তায় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ফটকে কিছু সাগরেদকে সাথে নিয়ে কর্তৃত্ব জাহির করে। গানেও দেখানো হয় নায়িকাকে জোর জবরদস্তির দৃশ্য। এক পর্যায়ে নায়িকারও রাজি হওয়ার দৃশ্যপট ভেসে ওঠে টিভির স্কিনে বা সিনেমাহলের রূপালি পর্দায়। এ দৃশ্য একজন উঠতি বয়সীকে কোনপথে ধাবিত করে? ক’জন পরিচালক তা ভেবে চিত্রায়নের উদ্যোগ নেন? ক’জন দর্শকই বা তাতে আপত্তি তুলে দায়িত্বশীলদের একটু কুম্ভুঘুম ভাঙানোর দায়িত্ব পালন করেন? একজন শিশু কেমন মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠবে, নিজেকে সার্থক বা সফল করতে হলে কিভাবে পরিশ্রম করতে হয়। পরিশ্রম করে সফলতা লাভে এবং ভালো মানুষ হয়ে সমাজের আদর্শবান মানুষ হওয়াটাই যে নায়কত্ব তা ক’টা সিনেমা-নাটকে পাওয়া যায়? চাবুক ধরে সুফথে রাখার চেষ্টা শুধু সেকেলেই নয়, অনেকটা অসভ্যতাও বটে। একজন কিশোরকে সহজেই বখাটে বলে আমরা সকলেই যেন দায় এড়ানোর চেষ্টায় মত্ত। একজন বিপথগামী কিশোরকে ধরে গাছে বেঁধে নির্যাতন নিশ্চয় সভ্যতা নয়। ওই কিশোর অবশ্যই কারো না কারো সন্তান। কোনো পিতা মাতাই চান না তার সন্তান বিপথগামী হোক, হোক বখাটে বা অন্যের পথের কাঁটা। তা হলে হচ্ছে কেন? বিষয়টি খতিয়ে দেখার বিষয়টি কি অতিব গুরুত্বপূর্ণ নয়?
সমাজকে বখাটে মুক্ত করতে হবে। রুখতে হবে বাল্য বিয়ে। এসব ক্ষেত্রেই শুধু নয়, সর্বক্ষেত্রেই আইন প্রয়োগে আপত্তি থাকার কথা নয়। অবশ্যই আইন অপরাধপ্রবণতা রোধে সহায়ক। তবে মনে রাখা দরকার আইন সমাজের সুস্থ সুন্দর পথের পাথেয় নয়, সহায়ক। সমাজকে সুন্দর করতে হলে আজকের শিশুদের সুন্দর মনের মানুষ হয়ে বেড়ে ওঠার সুযোগ দিতে হবে।  ভালো হওয়ার প্রতিযোগিতায় শিশু-কিশোরদের সামিল করতে না পারলে অপসংস্কৃতি ওদের সফেদ মগজটাই যে উগ্রতায় ভরিয়ে তুলবে তা বলাই বহুল্য। হচ্ছেও তাই। সে কারণে দরকার গতানুগতিকতার পরিবর্তন।  এ জন্য সকলকেই সামাজিক দায়বদ্ধতা সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থানে নিজের মতো করে গা বাঁচানোর মানসিকতা সুন্দর সমাজ গঠনকে রুদ্ধ করে।