শিক্ষিত হলেই কি তাকে সচেতন বলা চলে?

 

শিক্ষিত মানুষগুলোই সমাজের পথ প্রদর্শক। আদর্শ। খেয়াল খুশিতে মেতে শিক্ষিতরা যা ইচ্ছে তাই করলে সমাজে ভুল বার্তা পৌঁছায়। সে কারণে শিক্ষিত মানুষগুলোর চালচলন তথা কর্মকাণ্ডের মধ্যদিয়ে দায়িত্বশীলতা ফুটিয়ে তোলা অত্যাবশ্যকীয়। ত্রুটি যতো দ্রুত সুধরে নেয়া যায় ততোই মঙ্গল। শিক্ষিত মানুষগুলোকে মনে রাখা দরকার, শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ এই সমাজই গড়ে দেয়। দিয়েছে। ফলে সমাজের কাছে দায়বদ্ধতা অনেক। পক্ষান্তরে শিক্ষিতের নিকট থেকে কিছু পেতে হলে সমাজকেও সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হয়। ঈর্ষা বা হিংসায় মেতে নয়।

একজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে নেশাগ্রস্ততার অভিযোগ সচেতন সমাজকে হতবাক করে। এর ওর কাছে ঋণখেলাপি? সেটাও সুস্থ স্বাভাবিক মানসিকতার বহির্প্রকাশ নয়। বিয়ে বহির্ভূত দাম্পত্য? সমাজ স্বীকৃত নয়। ভুল চিকিৎসার বিষয়ে নানাবিধ ব্যাখ্যা আছে। মাদক সুস্থ মানুষকে অসুস্থ করে। চিকিৎসা সেবার মতো মহান পেশায় যে ব্যক্তি নিয়োজিত তিনিই যদি মানসিকভাবে সুস্থ না হন তাহলে তার দ্বারা সুচিকিৎসার আশা করা কতোটা সমীচীন? একজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ উত্থাপন হলে চিকিৎসাদান কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষের দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ বাঞ্চনীয়। মেহেরপুর মুজিবনগর বল্লভপুর মিশন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একজন চিকিৎসককে সাময়িক বরখাস্ত করে যথোপযুক্ত পদক্ষেপই নিয়েছে বললে বোধ করি ভুল বলা হয় না। যদিও অভিযুক্তি চিকিৎসক ডা. রিচার্ড সরেন উত্তম তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগসমূহ সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন। তার এ দাবি অবশ্যই গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করে যথযাথ কর্তৃপক্ষ দ্রুত এবং সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে আমাদের বিশ্বাস। কারণ? অনেক সময় গুচ্ছ অভিযোগের আড়ালে সূক্ষ্ম চক্রান্তও লুকিয়ে থাকে।

মেহেরপুর বল্লভপুর মিশন হাসপাতালটি এক সময় সুচিকিৎসার নির্ভরশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে এলাকাবাসীর মাঝে স্বীকৃত ছিলো। কর্তৃপক্ষকে সেই ধারা ধরে রাখতে হলে সকল বিতর্কের ঊর্ধ্বে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন দায়িত্বশীল দক্ষ চিকিৎসক। চিকিৎসা প্রদানের মতো অনুকূল পরিবেশ। দক্ষ চিকিৎসক গ্রামপর্যায়ে এমনিতেই থাকতে চান না। তার ওপর রয়েছে তাকে বিতাড়িত করার নানামুখি ষড়যন্ত্র। বল্লভপুর মিশন হাসপাতালটি যেহেতু অলাভজনক এবং সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা প্রদান কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে সেহেতু প্রতিষ্ঠানটির দিকে এলাকার দায়িত্বশীল সকলকেই আন্তরিক দৃষ্টিতে দেখা উচিত। একজন চিকিৎসকের কারণে যেমন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের দুর্নাম মেনে নেয়া যাবে না, তেমনই কেউ বা কোনো গোষ্ঠী চিকিৎসক বিতাড়িত করার মতো ষড়যন্ত্র করলে তাও শক্ত হাতে প্রতিহত করা প্রয়োজন। এ জন্যই দরকার অভিযোগের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত। তদন্তে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের সত্যতা মিললে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। আর তা না হলে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আর এটা করতে হবে সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সেবাদানের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার স্বার্থে।

শুধু চিকিৎসকই নয়, সমাজের শিক্ষিত মানুষগুলোকে অধিক দায়িত্বশীল হতে হয়। বিপথগামিতা থেকে রক্ষার জন্য যেমন দায়িত্বশীলতা প্রয়োজন, তেমনই সমাজের সাধারণ মানুষগুলোকে সচেতন করার জন্যও দরকার দায়িত্বশীলতা। শিক্ষিতদের কেউ কেউ যে বিপথগামী হচ্ছেন না, তা নয়। সে কারণেই শিক্ষার আলোকে কাজে লাগিয়ে অভিযোগের আগেই নিজের ত্রুটি নিজেকে শনাক্ত করে সুধরে নেয়া উচিত। ওই শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া দরকার, যে শিক্ষা স্থান-কাল-পাত্র ভেদে সুপথে চলতে সহায়তা করে। তা না হলে শিক্ষিত হলেই কি তাকে সচেতন বলা চলে?