শিক্ষা সম্প্রসারণে বাধা দ্রুত অপসারণ কাম্য  

 

গাইড বই বাজারে বিক্রিই যখন নিষিদ্ধ তখনও বিদ্যালয়ের শিক্ষক সেই বই কিনতে বাধ্য করছেন? চুয়াডাঙ্গা এমএ বারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্র গাইড বই না কেনার জন্য বেত্রাঘাতও করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে অভিভাবকদের একাংশ বলেছেন, শিক্ষকের নির্যাতনের কারণে ছেলে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। বিষয়টি জানতে গেলে শিক্ষক অভিভাবকদের সাথেও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন।

দেশের শুধু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও সম্পূর্ণ বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করছে সরকার। কোনো কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে লেখাপড়ায় উদ্বুব্ধ করার পাশাপাশি মধ্যদিয়ে বিদ্যালয়ে নিখরচায় খাওয়ার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। এসবই জাতির ভবিষ্যতের জন্য। কৃমিনাশক সেবন? সেটাও পুষ্টির অপচয় রোধে তথা জাতির মেধা বিকাশে। তাছাড়া বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত দূরাস্ত, বেত নিয়ে শিক্ষকের শ্রেণিকক্ষে প্রবেশও বারণ। তারপর যখন বিক্রি নিষিদ্ধ গাইড বই কিনতে বাধ্য করার জন্য বেতের ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে তখন তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের বিষয়টি অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। যদিও তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, উত্থাপিত অভিযোগ সঠিক নয়। এ দাবি তদন্তের গুরুত্ব কমায় না, বরঞ্চ কোনটি সঠিক তা যাচাই করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ বাড়ে। কেননা শিক্ষকদের অনেকেই যে উপঢৌকনের মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির বাজারজাত করা গাইডবই শিক্ষার্থীদের কিনতে বাধ্য করেন তা অস্বীকার করা যায় না। অবাক হলেও সত্য যে, চুয়াডাঙ্গা এমএ বারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের যে শিক্ষার্থীদের গাইড বই না কেনার জন্য বেত্রাঘাতসহ নানা হুমকিধামকি দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উত্থাপন হয়েছে তারা সত্যিই দুস্থ দরিদ্র পরিবারের সন্তান। এমনিতেই দরিদ্র পরিবারের ছেলে মেয়েদের প্রাইমারির গণ্ডি পার হওয়ার আগেই কাজে লাগিয়ে দেন দোকানে বা ছোট-বড় কোনো কারখানায়। এপর যখন গাইড বই কিনতে না পারার জন্য বিদ্যালয়ে যাওয়াই বন্ধ করতে হয়, বিষয়টি জানার জন্য অভিভাবকদের কয়েকজন গেলে তাদেরও যখন লাঞ্ছিত হতে হয়েছে বলে অভিযোগ, তখন ঘটনাটি খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। এ ধরনের ঘটনার শিকার হয়ে কোনো একজন শিক্ষার্থীর যাওয়ার খেসারত অবশ্যই জাতিকেই বহন করতে হয়। তাছাড়া গাইড বই শিক্ষার মানবৃদ্ধিতে চরম অন্তরায়। ফলে তা কেনা এবং পড়ানো বারণ।

সব সময়ই সব অভিযোগ যে সত্য হয় তা যেমন নয়, তেমনই অভিযোগ মাত্রই মিথ্যা নয়। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ। শিক্ষা ছাড়া জাতির অগ্রযাত্রা আশা করা অবান্তর। সরকার নানাভাবেই শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে সর্বস্তরের শিক্ষা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে জাতিরই স্বার্থে। কোনো বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের কারণে সেই উদ্যোগের গায়ে ন্যূনতম আঘাত মেনে নেয়া মানেই অনিয়মকে প্রশ্রয় দিয়ে জাতির ভবিষ্যত ক্ষতিগ্রস্ত করা।