শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার কী ফল বয়ে আনবে?

দেশে শিক্ষার বিস্তার ঘটেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু মানসম্মত শিক্ষার প্রসার ঘটেছে বলা যাবে না। ভালো মানের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে মানসম্মত শিক্ষার যথাযথ উপকরণ ও ব্যবস্থা থাকলেও শিক্ষা সেভাবে হচ্ছে না। মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের স্কুলভিত্তিক সর্বশেষ স্ব-মূল্যায়ন প্রতিবেদনে মাধ্যমিক শিক্ষার যে হাল-হকিকতের চিত্র ফুটে উঠেছে তা আশাব্যঞ্জক নয়। বরং হতাশাই বাড়ায় ‘দেশে’ খুব ভালো মানের মাধ্যমিক স্কুল এখনও দশ শতাংশের কম। শিক্ষা নিয়ে এতো হাঁকডাক শোনা গেলেও ভালো স্কুলের সংখ্যা এখনও দুই অঙ্কের কোটাতেও পৌঁছুতে পারেনি। এমন করুণদশা স্পষ্ট করে আদতে শিক্ষার মান বাড়ানোর কাজটি পিছিয়ে আছে। এই যদি হয় মাধ্যমিক স্তরের অবস্থা, তাহলে শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার কী ফল বয়ে আনবে? জাতির ভবিষ্যত তৈরি হচ্ছে তবে দুর্বল ও নিম্নমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে। শিক্ষা খাতে পর্যাপ্ত অর্থ ব্যয় মূলত কোনো সুফল বয়ে আনছে না। প্রতিবেদনই বলছে, দুর্বল ও অকার্যকর বিদ্যালয়ে ঠিকমতো পাঠদান হয় না। শিক্ষার পরিবেশও ভালো নেই। ফলে পরীক্ষার ফলাফলও ভালো হওয়ার কোনো কারণ দাঁড়ায় না। পাহাড়ি, হাওড়, উপকূলীয় এলাকা ছাড়াও নদীমাতৃক এলাকা এবং সমতল এলাকায় প্রায় ১০ শতাংশের মতো প্রতিষ্ঠান রয়েছে চ্যালেঞ্জের মুখে। সারাদেশের মোট ১৮ হজার ৪১৫ স্কুল মূল্যায়নের ফলাফলই প্রমাণ, দুর্বল বিদ্যালয়গুলো লেখাপড়াবিমুখ অবস্থানে রয়েছে। শিক্ষণ ও শেখানোর পরিবেশ, প্রতিষ্ঠান প্রধানের নেতৃত্ব, শিক্ষকদের পেশাদারিত্ব, শিক্ষার্থীদের কৃতিত্ব, সুপেয় পানি এবং টয়লেটের ব্যবস্থা ও সহ-শিক্ষাক্রমিক কর্মসূচি এবং সহশিক্ষা কার্যক্রম বিষয়ে মূল্যায়ন জরিপ করা হয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সহায়তায়। মাঠ পর্যায়ের পর্যবেক্ষণ, পরিদর্শন এবং মনিটরিং জোরদার না হওয়ার কারণে মানে হেরফের ঘটছে বলা যায়। দেশে ভালো মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাব থাকলেও সে অভাব পূরণ হচ্ছে কমই। মূল্যায়নের মাধ্যমে বিদ্যালয়গুলো আত্মবিশ্লেষণ করলেও সমাধানের পথ অনুসন্ধান করছে না। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা লাঘবের কাজটি শিক্ষা দফতরের হলেও তারা এতে মনোনিবেশে আগ্রহী নয়। বরং নতুন নতুন বিদ্যালয় স্থাপিত হচ্ছে দফতরের অতি আগ্রহে। কিন্তু এসবের মান ভালো করার ক্ষেত্রটি রয়ে যাচ্ছে অবহেলিত। এটা তো বাস্তব যে, একজন শিক্ষার্থীর জীবনের দিকনির্দেশক কম্পাসের ভূমিকা পালন করে তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু সে প্রতিষ্ঠান যদি হয় দুর্বল, অকার্যকর, মধ্যম মানের তবে উন্নত শিক্ষায় শিক্ষিত ও দীক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার সব আয়োজনই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে বাধ্য। জাতীয় শিক্ষানীতি এ করুণদশা থেকে উদ্ধার করতে পারছে না। শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ভালো মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশের সকল বিদ্যালয় গড়ে উঠুক এই কামনা সবারই। কর্তৃপক্ষের যদি টনক নড়ে তবে বিদ্যমান অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব।