শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা সফল বাস্তবায়নই প্রত্যাশিত

একটি রাষ্ট্রে বসবাসরত নাগরিকের মৌলিক অধিকারের প্রশ্নে শিক্ষা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্বও রয়েছে নাগরিকের সুষ্ঠু শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা। মানুষের সাধ্যের মধ্যে শিক্ষাব্যয় নির্ধারণ এবং সে অনুযায়ী শিক্ষাসুবিধা নিশ্চিত করতেও সরকার বাধ্য। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য যে, শিক্ষাকে একটি লাভজনক পণ্য হিসেবে নিয়ে বাণিজ্যে নেমেছে দেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বেশির ভাগ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই রয়েছে নীতিভঙ্গের অভিযোগ। নামি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এ প্রবণতা আরো ভয়াবহ। এসব প্রতিষ্ঠান সরকারের নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে উন্নয়নের নামে ভর্তির সময় নিয়ে থাকে অতিরিক্ত অর্থ। অনেক ক্ষেত্রে অনুদান হয়ে দাঁড়ায় নামিদামি স্কুলে ভর্তির অন্যতম মাপকাঠি। বলা বাহুল্য, সন্তানের আলোকিত ভবিষ্যতের আশায় অভিভাবকরাও প্রকারান্তরে জিম্মি হয়ে পড়েছেন এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে। সরকারও যেন অনেকটা অসহায় এদের কাছে। আশার কথা যে, গত বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় বেসরকারি স্কুলে ভর্তি নীতিমালা জারি করেছে। ঘোষিত নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে তা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-সংশ্লিষ্টদের দৌরাত্ম্য রোধে ইতিবাচক হবে বলে আশা করা যায়। তথ্যমতে, নতুন শিক্ষাবর্ষে বেসরকারি স্কুলে ভর্তি নীতিমালা জারির আগেই দেশের বিভিন্ন বেসরকারি স্কুলে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হলেও অধিকাংশ স্কুলের ক্লাস সমাপনী পরীক্ষা এখনো শেষ হয়নি। আবার জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষাও চলমান। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য যে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, সে বিষয়ে সন্দেহ জাগে না। শিক্ষাসুবিধা পেতে কোনো নাগরিক কিংবা প্রতিষ্ঠান যদি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে কিংবা ফাঁদ পাতে, তাহলে নিশ্চিতভাবে সেই ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান সংবিধানবিরোধী কাজ করার অপরাধে অপরাধী হতে পারে। অথচ এই সাধারণ বক্তব্য জানার পরও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দেশের বেশির ভাগ বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অধিক হারে অর্থ আদায় করে আসছে দীর্ঘদিন। এ নেতিবাচক প্রবণতা একটি রাষ্ট্রে কিছুতেই চলতে পারে না। আমরা অতীতের বছরগুলোয় লক্ষ্য করেছি, ভর্তির সময় হলে সরকারের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, কাজের কাজ কিছুই হয় না।

স্কুলগুলো যথারীতি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে। এর আগে সরকার তদন্তের মাধ্যমে সত্যতা পেয়ে কয়েকটি স্কুলকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। কিন্তু অধিক অর্থ আদায়ের এই অনৈতিক কাজ করা থেকে তাদের বিরত করা যায়নি। ফলে এ ব্যর্থতার দায় সরকারের কাঁধেই পড়ে। আমরা মনে করি, শিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণের পথ থেকে সরিয়ে আনা না গেলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা অনিশ্চিত পথেই যাত্রা করবে। বলা বাহুল্য, সরকারের শিক্ষা উন্নয়ন কার্যক্রম বিভিন্নভাবে প্রশংসিত হলেও এ দিকটি রয়ে গেছে পশ্চাদমুখি। তাই এ খাতে সরকারকে অধিকতর দৃষ্টি দেয়ার প্রয়োজন। সম্প্রতি জারিকৃত ২০১৫ শিক্ষাবর্ষে বেসরকারি স্কুলে ভর্তি নীতিমালায় ভর্তি ফি, মফস্বল ও মহানগর এলাকায় সেশন চার্জসহ ভর্তি ফি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন বেসরকারি স্কুলের শ্রেণি অনুযায়ী ভর্তি ফি গ্রহণের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।

রাজধানীর বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যমের জন্য সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা ভর্তি ফি নির্ধারণসহ ভর্তি পরীক্ষার সময়ও নির্ধারণ করা হয়েছে এ নীতিমালায়। আমরা মনে করি, এখন এ নীতিমালা বাস্তবায়নের ওপরই নির্ভর করছে এর সার্বিক সফলতা। সংশ্লিষ্ট বিভাগ তথা সরকারকে এই নীতিমালা বাস্তবায়নের ওপরই অধিক গুরুত্বারোপ করতে হবে। আমরা বলতে চাই- শিক্ষাকে যেন কেউ পণ্য হিসেবে দেখার সুযোগ না পায় তা নিশ্চিতের দায়িত্ব সরকারের। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির নিয়ম আছে। সরকার ভর্তি ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে।

শিক্ষকদের কোচিং-বাণিজ্য বন্ধে আদালতের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এ নির্দেশনার বাইরে যাতে কেউ না যেতে পারে তার ব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে। প্রয়োজনে আরো কঠোর হতে হবে। মনে রাখতে হবে, শিক্ষা পণ্য হিসেবে গণ্য হলে তা ভবিষ্যতে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে।