শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ ও ডাকসুর নির্বাচনও জরুরি

কয়েক দিন ধরেই আলোচনায় রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। হঠাৎ করেই যেন অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ। কলেজ অধিভুক্তির প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে শুরু হওয়া আন্দোলন কি এখন রাজনৈতিকভাবে অন্যদিকে মোড় নিতে যাচ্ছে? গত কয়েক দিনের ঘটনাবলী সাধারণ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে শঙ্কার সৃষ্টি করেছে। অনেক দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় ধরনের কোনো গোলযোগ হয়নি। আগের মতো অস্ত্রের ঝনঝনানি নেই। মারমুখী অবস্থানে নেই ছাত্রসংগঠনগুলো। শিক্ষাপঞ্জি শুরু হচ্ছে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে। সেশনজট দূর হয়েছে। এই পরিবেশ শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের মধ্যেও স্বস্তি এনে দিয়েছিলো। কিন্তু সেই পরিবেশ কি বদলাতে যাচ্ছে? গত মঙ্গলবারের ঘটনার প্রতিবাদে ২৯ জানুয়ারি সারা দেশে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে। এর আগে ২৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংহতি সমাবেশ করবে বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর জোট। এ ধরনের কর্মসূচি আসার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবার অশান্ত হতে যাচ্ছে এ আশঙ্কা বোধ হয় অমূলক নয়।

শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলা ও ছাত্রী নিপীড়নের অভিযোগে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিচার দাবিতে উপাচার্য কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীরা ফটকের তালা ভেঙে উপাচার্যকে কয়েক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। বিকেলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সেখানে গিয়ে উপাচার্যকে মুক্ত করতে গেলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিনা উসকানিতে ছাত্রলীগকর্মীরা হামলা চালায়। অন্যদিকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ, উপাচার্যকে আটকে রেখে আন্দোলনকারীরা লাঞ্ছিত করেছে। খবর শুনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এগিয়ে গেলে বাম সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রবেশপথ বন্ধ করে দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের ওপর আক্রমণ চালিয়েছিলো। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা মানববলয় তৈরি করে তাঁকে রক্ষা করেন। বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ প্রত্যাহার করে ছাত্রলীগ দাবি করেছে, তারা শুধু অছাত্রদের হামলা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে উদ্ধার করেছে। ছাত্রলীগ সেখানে হস্তক্ষেপ বা মারামারি করতে যায়নি বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি ছোট করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। প্রথমত, বছরটি নির্বাচনের বছর। এই সময়ে কোনো একটি সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠী যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ অস্থিতিশীল করে তুলতে চাইবে, এমন সন্দেহ বোধ হয় অমূলক নয়। অন্যদিকে উচ্চ আদালত থেকে ডাকসু নির্বাচনের নির্দেশনা দেয়ার পর অনেক সংগঠনই বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের অবস্থান দৃঢ় করতে চাইবে। পাশাপাশি কোনো সংগঠন যদি শক্তির মহড়া দেয়, তাতেও বিস্মিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। অতীতে অনেকবারই এমন ঘটনা ঘটেছে। তবে যেকোনো অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা রোধ করতেই হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞানচর্চার পাশাপাশি লেখাপড়ার পরিবেশ বজায় রাখার কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ ও ডাকসুর নির্বাচনও জরুরি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করা যাবে না। ঢাকা থেকে এই অস্থিতিশীলতা যেন দেশের অন্য কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে না পড়ে সেদিকেও দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। সব সংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।