শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত এবং শিক্ষকের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন

 

তাই বলে শাসন করা যাবে না? অবশ্যই শাসনের এখতিয়ার শিক্ষকের রয়েছে। শাসনের বহুবিধ ধরন রয়েছে। বেত্রাঘাতে দেগে দেয়া দুরস্ত ভীতিকর আচরণে যে শিক্ষক শিশু শিক্ষার্থীদের শাসন করেন, তার শিক্ষকতার দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অমূলক নয়। শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে যে শিক্ষক বেত্রাঘাতে গুরুতর আহত করেন তার মানসিকতা কেমন? বোদ্ধাদের তা উপলব্ধিতে খুব বেশি বেগ পাওয়ার কথা নয়। নির্যাতক শিক্ষকের উচিত শিক্ষা কাম্য।

 

চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের মাঝেরপাড়ার আবিদ হাসান ৯ম শ্রেণির ছাত্র। স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারে না। শারীরিক প্রতিবন্ধী। ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র হলেও কানাপুকুরপাড়ার এক গৃহশিক্ষকের নিকট থেকে শিক্ষা নেয় সে। তার অভিযোগ- সে শারীরিক অসুস্থতার কারণে কয়েকদিন প্রাইভেট পড়তে যেতে পারেনি। বাড়ির পড়াও হয়নি। প্রাইভেট পড়তে গেলে এসব কারণে তাকে বেত্রাঘাত করে গুরুতর আহত করেন প্রাইভেট টিউটর। এ অভিযোগ শেষ পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় পৌঁছেছে। থানায় মামলা রুজু করে অভিযুক্ত শিক্ষককে পুলিশ গ্রেফতারের অভিযানও শুরু করেছে। এ বিষয়ে গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

 

শারীরিক প্রতিবন্ধী একজন শিক্ষার্থী যখন বাড়তি দরদ থেকে বঞ্চিত তখন সাধারণ শিক্ষার্থীরা কতোটা নির্যাতনের শিকার? সঙ্গত কারণেই এ প্রশ্ন উঠে আসে। যদিও শিক্ষক পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলা হতেই পারে- ‘আবিদ হাসান খুব বেয়াদব। বেয়াড়া। এ কারণেই তাকে বেত্রাঘাত করতে হয়েছে।’ পক্ষান্তরে পাল্টা প্রশ্নও উঠতে পারে- যে শিক্ষক শিক্ষা দিয়ে শিক্ষার্থীকে আদব ও অনুগত করতে পারেননি তা হলে তিনি কেমন গুরু? বিদ্যালয়ে এক সময় বেত হাতে নিয়ে শিক্ষক মশাইদের প্রবেশ করতে দেখা যেতো। বেত্রাঘাত ছিলো অনেকটাই সমাজ স্বীকৃত। সে যুগ অনেক আগেই গত হয়েছে। বিজ্ঞান যুগে নানাভাবেই পরীক্ষিত- শিক্ষার্থীকে মেরে-ধরে বকে-ঝকে নয়, আদর সোহাগ আর বিনোদনে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করতে পারাটাই শিক্ষকের মূল দায়িত্ব। আর আদব শিক্ষা? বাধ্য বা অনুগত করা? আদর্শ বহু শিক্ষক রয়েছেন যারা ন্যূনতম চোখ রাঙানি ছাড়াই শিক্ষার্থীদের দিব্যি অনুগত করে সুপথে রাখতে সক্ষমতা দেখিয়েছেন। দেখাচ্ছেন। তাদের থেকে শিক্ষা নেয়া কি উচিত নয়?

 

আজকের শিক্ষার্থী আগামী দিনের কর্ণধার। তাদেরকে যোগ্য দক্ষ করে গড়ে তোলার দায়িত্ব শিক্ষকসহ অভিভাবক মহলের। অবশ্যই সকল শিক্ষকের শিক্ষাদানের ধরন এক নয়। শিক্ষক শিক্ষাদান করেন, শিক্ষকের প্রতি অনুগত করতে অভিভাবকদেরও দায়িত্ব অনেক। শিক্ষার্থীর প্রতি বাড়তি নজর, বাড়তি দায়িত্ববোধ কখনো কখনো অধৈর্যের হলেও বেত্রাঘাত কাম্য নয়। দক্ষতার সাথে শিক্ষার্থীকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করাই আদর্শ শিক্ষকের নৈতিক দায়িত্ব।