শহীদ হাসান চত্বরের জুয়েলারি দোকানে চুরি : কিছু প্রশ্ন

শহীদ হাসান চত্বরকে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র বললে ভুল বলা হয় না। এ চত্বরে যেমন রাত-দিন লোক সমাগম থাকে, তেমনই চত্বর ঘেঁষা সদর থানা। পাশের বটতলায় রাতের অধিকংশ সময়ই থাকে টহল পুলিশের গড়ি। শহীদ হাসান চত্বরের অপর প্রান্তে সোনালী ব্যাংক চুয়াডাঙ্গা শাখা। এ ব্যাংকের অভ্যন্তরে গাড়ি রাখা ঘরের চালে বসে পাশের জুয়েলারি দোকানের দেয়াল কেটেছে চোর। চুরি করে নিয়ে গেছে প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের সোনা, সোনার গয়না। কীভাবে সম্ভব? এ প্রশ্ন চুয়াডাঙ্গার সকল দোকানিকেই উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।

 

দেয়াল কাটার সময় ব্যাংক প্রহরীরা কী করছিলেন? পাশের পরের দেয়াল কাটা ঠেকানোর দায়িত্ব ব্যাংক প্রহরার কাজে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের ওপর হয়তো বিশেষভাবে দেয়া হয়নি, তাই বলে চোখের সামনে দেয়াল কেটে চুরি হবে আর নীরব থাকবেন তারা? দেখেও না দেখা মানে জেগে ঘুমানো, অপরাধকে সমর্থন করা। আর যদি সেদিকে নজর না পড়ে তা হলে? দায়িত্ব অবহেলা নয় কি? এসব প্রশ্ন যেমন সংশ্লিষ্ট এলাকার সাধারণ ব্যবসায়ীদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তেমনই থানার ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে দুঃসাহসিক চুরির ৩৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও পুলিশ গারদে নিতে পারেনি চোরচক্রের কাউকে। চুরি হওয়া প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের সোনার গয়না কি পুলিশ উদ্ধারে আদৌ সক্ষমতা দেখাতে পারবে?

 

চুয়াডাঙ্গা শহীদ হাসান চত্বরের উত্তরপ্রান্তে দীর্ঘদিনের জুয়েলারি দোকানটির সামনের অংশ বেশ শক্ত। এ দোকানের পেছনের এক পাশের দেয়াল কেটে চুরি হয়েছে। পাশের একটি হোটেলের দেয়ার ঘেঁষে সরু স্থান দিয়ে ওই দেয়ালের নিকট চোর গেলে যেতেও পারে। চোর যেদিক দিয়েই যাক, সোনালী ব্যাংকের সীমানা পাঁচিলের ওপর উঠতে হয়েছে। বসে কাটতে হয়েছে জুয়েলারি দোকানের দেয়াল। চোখের পলকে যেমন (অ)কাজটি সম্ভব হয়নি, তেমনই সরু পথটি খুঁজে পাওয়াও হঠাত আগত চোরের দ্বারা প্রায় অসম্ভব। এসব বিশ্লেষণ করে অনেকেরই অভিমত, চোর পূর্ব পরিকল্পিতভাবেই চুরি করেছে। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন- যে অপরাধমূলক কাজ পূর্ব পরিকল্পিত সে (অ)কাজ রোধে বিশেষ প্রশিক্ষণ ছাড়া গোয়েন্দা পুলিশে চাকরি কেন?

অবশ্যই অপরাধমূলক ঘটনা ঘটার পরে নয়, ঘটনা ঘটানোর আগেই অপরাধীকে ধরে আইনে সোপর্দ করার মতো দক্ষ পুলিশ বাহিনী গড়ে তোলা দরকার। সেটা যেহেতু রাতারাতি সম্ভব নয়, সেহেতু যারা দায়িত্ব পালন করছেন তাদেরকেই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করার পাশাপাশি তাদের কর্তব্যপরায়ন করতে স্বচ্ছ জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পদস্থদের আরো আন্তরিকতা প্রয়োজন। চুয়াডাঙ্গা শহীদ হাসান চত্বরের দোকানে চুরির সাথে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতারের পাশাপাশি চোরাই মালামাল উদ্ধারে পুলিশের সফলতা কাম্য।